এবার ভারতীয় মিডিয়ার ‘ভুয়া খবরের ক্ষেপণাস্ত্র’ পাকিস্তানের দিকে

1

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গত বছরের আগস্টের ঘটনা। তখন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়াতে থাকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এবার তাদের প্রোপাগান্ডা বা ‘ভুয়া খবরের ক্ষেপণাস্ত্র’ তাক করা হয়েছে পাকিস্তানের দিকে।
গত ৬ মে রাতে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতের ওই হামলার পর জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা নিরসনের ডাক দেয়। সীমান্তে একের পর এক হামলা ও গোলাগুলির ঘটনার ফলে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ৮ মে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক তৎপরতার অভিযোগ আনে।
পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ প্রচার হতে থাকে। তবে এর মধ্যে ছড়াতে থাকে নানা ভুয়া খবরও। অবশ্য পাকিস্তানেও যে ছড়াচ্ছে না, তা নয়। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থার বলছে, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর (পিএএফ) একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভারত ভূপাতিত করেছে—ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর এমন দাবি স্পষ্ট মিথ্যাচার ও ভুয়া সংবাদ। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, বিপদের আশঙ্কায় এখন ভারত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আগ্রাসনকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তারা রাজস্থান, পাঠানকোট ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলার গল্প সাজাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৯ সালের ‘অপারেশন সুইফট রিটর্ট’-এর সময় ভারতের ভুয়া প্রচারণার সঙ্গে বর্তমান বিভ্রান্তিকর প্রচারের ব্যাপক মিল রয়েছে। সেই সময় পাকিস্তান বলেছিল, ভারতের বালাকোটে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা দুইটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে।
এদিকে, পাঠানকোট, জয়সালমির ও শ্রীনগরে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হামলার যে অভিযোগ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রচার করছে, তা “ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এসব দাবির কোনো ভিত্তি নেই এবং এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বেপরোয়া প্রচার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বারবার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন ভারতের একটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, যাতে করে তারা আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করতে পারে এবং পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের আকাশে ছুটে যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র। বহু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভিডিওটি সম্প্রচার করেছে এবং দাবি করেছে, এটি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে ভারতের হামলার দৃশ্য।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একের পর এক গুজব ছড়ানো শুরু হয়।
সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল রিপাবলিক বাংলা, যারা মোট পাঁচটি ভুয়া তথ্য স¤প্রচার করে। হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, এবং লাইভ মিন্ট—প্রতিটি তিনটি করে ভুয়া খবর প্রকাশ করে।
এ ছাড়া, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ, এবং আজ তাক—প্রতিটি দুটি করে গুজব প্রচার করে। বাকি ৪১টি গণমাধ্যম প্রতিটি একটি করে ভুয়া খবর ছড়ায়।
এবার নজর দেওয়া যাক পাকিস্তানের দিকে। ভারতের হামলা নিয়ে ভুয়া তথ্য বা অপপ্রচার নিয়ে পাকিস্তানও কম যাচ্ছে না। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
সাম্প্রতিক উত্তেজনায় পাকিস্তানের দিক থেকে ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া একটি ছবি নিয়ে দাবি করা হয়, এটি জম্মু বিমানঘাঁটিতে বিস্ফোরণের। তবে পিআইবি ফ্যাক্ট চেক স্পষ্ট করে, ছবিটি না বর্তমানে তোলা, না ভারতের। এটি আসলে আগস্ট ২০২১-এর কাবুল বিমানবন্দরের বিস্ফোরণের ছবি।