এবার পানি সংকটে আগ্রাবাদ-হালিশহর

4

এম এ হোসাইন

রমজানে পানির বাড়তি চাহিদা থাকে। গরম বাড়ায় চাহিদা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নগরীর আগ্রাবাদ-হালিশহরসহ আশপাশের এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। পাহাড়তলী সাগরিকা মোড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার স¤প্রসারণ প্রকল্পের কাজ চলাকালীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে আগ্রাবাদ-হালিশহরসহ আশেপাশের এলাকায় আগামী কয়েকদিন তীব্র পানির সংকট দেখা দিতে পারে।
পাহাড়তলী সাগরিকা মোড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১০০ মি.মি ব্যাসের একটি প্রধান সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
পিজিসিবি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার স¤প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অবহেলাজনিত এমন দুর্ঘটনা ঘটে। যার কারণে পুরো আগ্রাবাদ-হালিশহর এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, হালিশহর-আগ্রাবাদ এরিয়াতে আমরা যে পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করি সেটা ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। পুরো এলাকায় এখন পানি বন্ধ অবস্থায় আছে। বিদ্যুতের ক্যাবল ড্রিলিং করতে গিয়ে তারা আমাদের ৪৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ছিদ্র করে ফেলেছে। তাদেরকে আমরা পাইপের ডিজাইন-ড্রইং দিয়েছিলাম, কাজ করার আগে আমাদের জানানোর কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটা না মেনেই কাজ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ঢাকায় বসে আছেন। যে ঠিকাদার কাজ করছেন তিনিও ঢাকায়। এখানে সাব কন্ট্রাক্টর কাজ করছে, যারা কাজের আগামাথা কিছুই বুঝে না।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, এই সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে হালিশহর এলিভেটেড ট্যাংক হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আগ্রাবাদ বা/এ, আগ্রাবাদ সিডিএ আ/এ, পশ্চিম মাদারবাড়ি, হালিশহর, বড়পুল, ছোটপুল, বেপারিপাড়া, গোসাইলডাঙ্গা, পানওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, ধনিওয়ালাপাড়া, কদমতলী, হাজীপাড়া, শান্তিবাগ, মুহুরীপাড়া, পাহাড়তলী, ঈদগাঁ, দেওয়ানহাটসহ আরও বেশ কিছু এলাকা। সঞ্চালন লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এসব এলাকায় পানির স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত মাসেও ওয়াসার প্রধান সঞ্চালন লাইন ফুটো হয়েছিল। তখন টানা এক সপ্তাহ নগরের এক তৃতীয়াংশ এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কে তখন এক্সকেভেটরের আঘাতে পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই কারণে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে পানির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তখন নগরের হালিশহর, আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখানবাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলী, ধনিয়ালপাড়া, নয়াবাজার, ষোলশহর ২নং গেট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, চকবাজার, নন্দনকানন, সিরাজদ্দৌলাহ রোডসহ প্রায় ৩০টি এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।
প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, রমজানের আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করতে গিয়ে যে ফুটো হয়েছিল সেটার সঙ্গে এই সমস্যার পার্থক্য আছে। এবারের ক্ষতিগ্রস্ত পাইপের কারণে বেশি সময় লাগবে, কারণ এখানে শিপ পাইল ড্রাইভ করতে হবে এবং কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মেরামতের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে এই সময়ে নাসিরাবাদ রিজার্ভার থেকে সামান্য পরিমাণ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে, কিন্তু পুরো এলাকা কভার করা যাবে না। কারও যদি অতি প্রয়োজন হয়, তাহলে ভাউচার নিয়ে পানি সংগ্রহ করা যাবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত কাজ শেষ করতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে। মেরামত কাজ শেষ হলে পুনরায় স্বাভাবিক পানি সরবরাহ চালু হবে এবং গ্রাহকদের ওয়াসার ওয়েবসাইট ও হেল্পলাইনের মাধ্যমে আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। ওয়াসা নগরবাসীকে পানি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানিয়ে অপ্রয়োজনীয় পানি অপচয় না করার অনুরোধ জানিয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে।