এবারও পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থীরা

23

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এ বছর আর ‘অটোপাস’ নয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে জুন-জুলাইয়ে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানোর কারণে তৈরি হয়েছে সংশয়। ধারণা করা হচ্ছে, ছুটি বাড়ার কারণে আরও এক/দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। এবার আর ‘অটোপাস’ নয়। তবে পরীক্ষা পিছিয়ে ‘জুলাই-আগস্টে’ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সময় গড়িয়ে গেলেও বোর্ড থেকে এখনও উপযুক্ত সিদ্ধান না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজারের মত পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। এই সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। এখনও ফরমপূরণ চলমান আছে। ইতোমধ্যে শিক্ষাবোর্ড থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ পূর্বদেশকে বলেন, লকডাউনের আগে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির সভায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর পর ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার হবে। এই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি কোভিড সংক্রমণ আবারো বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ফলে পরীক্ষাও আরও পেছাতে পারে।
এদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী জড়িয়ে যাচ্ছে অর্থ উপার্জনের কাজে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ লেখাপড়া থেকে সরে যাচ্ছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা। মিজানুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, আমার দুই ছেলেরই এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোলার তারিখ বার বার পিছিয়ে যাওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। এখন তারা মোবাইল গেইমসে সময় কাটাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে দেখেছি সেখানের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অর্থ উপার্জনের কাজে জড়িয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানিয়েছিলেন, পরীক্ষা দুটি জুন-জুলাইয়ে হতে পারে। কিন্তু ছুটি আবারো ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানোয় পরীক্ষা আরো এক/দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে। তবে করোনা ভাইরাস জনিত কারণে, পরীক্ষা কত সময় পিছিয়ে যেতে পারে তা পূর্ব থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়। শিক্ষামন্ত্রী সা¤প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় দেশের শিক্ষা বোর্ডসমূহ ২০২১ খ্রিস্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু চলমান লকডাউনের কারণে নির্ধারিত সময়ে ফরমপূরণ সম্পন্ন না হওয়ায় পরবর্তীতে আবারো সময় বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সহ জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষাও একই কারণে বাতিল করা হয়। সকল শিক্ষার্থীকে ‘অটোপাশ’ দিয়ে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করে ফল ঘোষণা করা হয়। ২০২০ খ্রিস্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। জেএসসি ও এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে এই ফলাফল প্রকাশ করে দেশের সকল শিক্ষা বোর্ড। পরবর্তীতে আইনি জটিলতা এড়াতে অটোপাশের এই ফলাফলের আইনি বৈধতা দিতে মহান সংসদে আইন পাশ করা হয়েছে। যাতে করে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা কোন জটিলতায় না পড়ে। জেএসসির ২৫% আর এসএসসির ৭৫% নম্বর একত্র করে এই ফলাফল দেওয়া হয়। সাবজেক্ট ম্যাপিং করে বিগত পাবলিক পরীক্ষা ফলাফলের ভিত্তিতে এই ফলাফল তৈরি করা হয়। সাধারণত স্বাভাবিক নিয়মে এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রæয়ারি মাসে, আর এইচএসসি পরীক্ষা মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়। করোনার কারণে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কিছু সময় পিছিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস অব্যাহত আছে।