এবারও চ্যাম্পিয়ন ‘বাঘা’ শরীফ

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলা’য় টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নের মুকুুট পরেছেন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ। গতকাল শুক্রবার নগরীর লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলায় প্রায় ২৩ মিনিটের লড়াই শেষে আয়োজক কমিটি শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করে। রানার্সআপ হন একই জেলার রাশেদ বলী। বেলা সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া ফাইনালে অংশ নেন ‘বাঘা’ শরীফ ও রাশেদ বলী। গতবারের মতো এবারও এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় চ‚ড়ান্ত পর্ব। আগের বারও জয়ী হন বাঘা শরীফ।
খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিকেল চারটায় খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ।
দেখা গেছে, বিকেল থেকেই লালদীঘি মাঠে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। করতালি আর ঢোলের তালে তালে দর্শকদের উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল পুরো মাঠ। বলীর লড়াইকে ঘিরে পুরো লালদীঘি এলাকা হয়ে ওঠে উৎসব মুখর। প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসে বৈশাখী মেলা, যা এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনকে আরও রঙিন করে তোলে।
জব্বারের বলীখেলা ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল জানান, বলীখেলার ১১৬তম আসরে এবার রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৪৭ জন বলী। জাতীয় পর্যায়ে বলীরাও এবারের আসরে অংশ নিয়েছেন।
তিনি জানান, গত বছর অংশ নিয়েছিলেন ৮৪ জন বলী। সেবারই প্রথমবার অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ফরিদ, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘বাঘা’ শরীফ নামে পরিচিত। রানার্সআপ হয়েছিলেন রাশেদ, আর তৃতীয় হন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা।
এদিকে আবদুল জব্বারের বলীখেলা ঘিরে নগরের লালদীঘি মাঠ ও এর আশপাশজুড়ে বসেছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। সিনেমা প্যালেস থেকে লালদীঘি মোড় হয়ে শাহ আমানত মাজার গেট। অন্যদিকে আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত বসেছে এ মেলার দোকানপাট। মেলা থেকে ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন নারী-পুরুষ, শিশু সবাই।
উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এটি ‘জব্বারের বলীখেলা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৯ সাল থেকে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় এই জব্বারের বলীখেলা।
জানা গেছে, ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।