‘এনসিটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে’

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে না দিয়ে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী।
গতকাল রবিবার বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি ও রপ্তানির ৯২ শতাংশ কাজ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর শুধুমাত্র অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র নয়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সাথেও চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট। তাছাড়া, বাংলাদেশের একমাত্র সামুদ্রিক বন্দর খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) একটি আধুনিক টার্মিনাল হিসাবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। এ জন্য টার্মিনালটি বিদেশি মালিকানায় ছেড়ে না দিয়ে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কু-নজর পড়ে রাজস্ব খাতের মূল চালিকাশক্তি এনসিটি টার্মিনালের উপর। দেশের অন্যতম অর্থ পাচারকারী ও শেখ পরিবারের প্রধান অর্থ যোগানদাতা সালমান এফ রহমান ব্যাংকসহ দেশের লাভজনক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে সর্বশেষ এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যে পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল দিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে এনসিটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। যদি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ‚ত্থান না হতো, তাহলে এতদিনে এই এনসিটি টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও সরকারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব খাত শেষ করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই উল্লেখ করে শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু সেই বিনিয়োগ হোক গ্রিন ফিল্ডে। যেমন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনোমিক জোনগুলোতে বিদেশিরা এসে বিনিয়োগ করছে। ঠিক তেমনি আমাদের বে-টার্মিনাল হতে শুরু করে সীতাকুন্ড-মিরসরাই ও মাতারবাড়িতে প্রচুর বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে। সেখানেই বিনিয়োগ আসুক। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত টার্মিনাল কেন বিদেশিদের দেয়া হবে তা বোধগম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের সাথে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য অনুরোধ করছি।
একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের অলাভজনক দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করে জি-টু-জি এর পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্র আহŸানের মাধ্যমে বন্দরের দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান অক্ষুন্ন রেখে বন্দরের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি পতেঙ্গা টার্মিনালের দেশবিরোধী চুক্তি দেশের জনগণের কাছে উন্মোচন করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দ্বারা চুক্তিটি পর্যালোচনা করতে হবে।
অন্যথায়, শ্রমিক-ছাত্র-জনতা আবারও দেশ ও দেশের মানুষের ভবিষ্যতের জন্য যে কোনো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে জানান শাহজাহান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. একেএম ফজলুল হক, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শফিউল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহেদুল করিম কচি, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এসএম লুৎফর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব, নগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোসাইন, বন্দর থানা আমির মাহমুদুল আলম, চকবাজার থানার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, কোতোয়ালী থানা সেক্রেটারি মোস্তাক আহমদ, বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইয়াছিন, শ্রমিক নেতা আদনান প্রমুখ।