নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়ার চেষ্টা থেকে আগামী ১৬ জুনের মধ্যে সরে না আসলে বন্দর অচল করার মত কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বন্দর ভবন গেটে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন টিইউসি-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্ত। শ্রমিকদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সঞ্চালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহেদ উদ্দিন শাহিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতা মহিন উদ্দিন, বিএফটিইউসির সাধারণ সম্পাদক কে এম শহিদুল্লাহ, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ ও বন্দর শ্রমিক দলের সাবেক (সিবিএ) এর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে তপন দত্ত বলেন, এনসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে আধুনিক টার্মিনাল। এই টার্মিনাল কোন দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া যাবে না। সরকারকে আমরা ১৬ জুন পর্যন্ত সময় দিতে চাই। আমরা আশা করবো এই সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এনসিটি ইজারা না দেওয়ার ঘোষণা দিবে। আর যদি তা না হয় তাহলে ১৭ জুন সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। গত ২৭ মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিতে কেন আমরা এনসিটি ইজারা দেওয়ার বিপক্ষে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় আমাদের বক্তব্য এসেছে। সুতারাং এরপরেও যদি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে বন্দর অচলের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বন্দর কেবল শ্রমিকদের ইস্যু নয়, এটা একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তাই এই আন্দোলনকে ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি উপস্থিত শ্রমিক কর্মচারীদের বন্দর ইস্যুতে আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে যুক্ত হওয়ার উদাত্ত আহবান জানান।
শ্রমিকনেতা এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের ইজারা দেয়ার পর কোনো সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। বরং দেশীয় ব্যবস্থাপনায় এনসিটি তাদের সক্ষমতার ১৮ শতাংশ বেশি সফলতা দেখিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যেন এনসিটি কোনো দেশি-বিদেশি মালিকানায় ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করা না হয়।
তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেন, সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হলে এবং এর জন্য পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় দায়িত্ব শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নিবে না।
কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, এখনো ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি ইজারা দেয়া না হলেও তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বন্দরে ঘুরাফিরা করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ভবিষ্যতে ডিপি ওয়ার্ল্ড এর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যেন বন্দরে আর দেখা না যায়।
এসময় সমাবেশে বেশকিছু দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, এনসিটিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে আনতে হবে, পিসিটি পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে রেড সি গেটওয়ের কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, রাখাইনে করিডোর তৈরির নামে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে এবং জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক ও জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।