এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ার চর বিদেশি অপারেটরদের কাছে ইজারা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল সভাপতি ও স্কপ কেন্দ্রীয় নেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এনসিটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সফল কনটেইনার টার্মিনাল। এটিকে বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও আত্মঘাতী। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে চট্টগ্রামে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) উদ্যোগে দিনব্যাপী গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিকরা। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় সরকার যদি অবিলম্বে এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা বাতিলের ঘোষণা না দেয়, কর্মবিরতি, হরতাল ও বন্দর অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন শ্রমিক নেতারা।শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সভাপতিত্বে ও টিইউসি’র কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের খোরশেদুল আলম, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, ডক শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মছিউদ্দৌলা, স্কপের যুগ্ম আহŸায়ক রিজোয়ানুর রহমান খান, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি নুরুল আবসার তৌহিদ, জাহেদ উদ্দিন শাহিন, শানেওয়াজ চৌধুরী মিনু, ইফতেখার কামাল খান, কাজী আনোয়ারুল হক হুনিসহ স্কপভুক্ত শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় তপন দত্ত বলেন, বিগত সরকারের সময়ে নেয়া এই একতরফা সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহাল রেখেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার এই চক্রান্ত জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। সরকারকে অবশ্যই এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রাম অচল করে দেয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণের সম্পদ রক্ষা করা, বিক্রি বা ইজারা দেয়া নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। একই সঙ্গে বন্দর শ্রমিকদের হয়রানি ও অযৌক্তিক কারণ দর্শানো নোটিশের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কর্মসূচি থেকে আগামী ৮ নভেম্বর শনিবার গণমিছিলের ডাক, ১৫ নভেম্বর শ্রমিক কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়।
স¤প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের গণবিজ্ঞপ্তির নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা বা পুলিশি বাধা দিয়ে কোনো ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করা যায়নি, এবারও যাবে না। শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের অধিকার আদায়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ অক্টোবর ঢাকায় এক সেমিনারে ডিসেম্বরের মধ্যে বন্দর ইজারা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। ঢাকার পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এই সেমিনারে তিনি এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, এর মধ্যে লালদিয়ার চর টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে ৩০ বছরের জন্য, আর বাকি দুই টার্মিনাল পরিচালনার মেয়াদ হবে ২৫ বছর।