চট্টগ্রাম কাস্টমস্ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা ১৪ মে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. শফিউল আজম খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার প্রারম্ভে এসোসিয়েশনের প্রয়াত সদস্যবৃন্দ, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল বীর শহীদ ও জুলাই’২৪ বিপ্লবে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সভায় শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. উবায়দুল হক আলমগীর।
স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এসোসিয়েশনকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান পরিষদের আগমন হয়েছে। অন্যান্য বাণিজ্যিক সংগঠনের ন্যায় এই এসোসিয়েশনে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, এসোসিয়েশনে প্রশাসক নিয়োগ হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, অন-চ্যাসিস ডেলিভারির আন্ডারটেকিং স্বাক্ষরসহ সিএন্ডএফ এজেন্টদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তিনি আরও বলেন, এনবিআর বিদ্যমান সিএন্ডএফ এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা রহিত করে নতুন বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সিএন্ডএফ পেশা স্বার্থবিরোধী ও বৈষম্যমূলক কোনো বিধান অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাতিলের জন্য প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দেশের প্রায় ২৮০০ সিএন্ডএফ এজেন্টের জীবিকা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেললে তা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, এই পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার সময় যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে কোনোভাবে পিছপা হবে না। প্রতিটি কর্মকান্ডে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সদস্যরা আমাদের চলার সঙ্গী, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। তবে আমরা এমন কোনো ভুল করব না যা ক্ষমার অযোগ্য। তিনি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠনকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করার আহ্বান জানান। তিনি আগামীর সকল কার্যক্রমে সদস্যদের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী ২০২৪ সালের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, এই পরিষদ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যেতে চায়। দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০ দিনের মধ্যে গৃহীত কার্যক্রম সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা রক্ষা করা হবে। তিনি জানান, সদস্যদের দৈনন্দিন আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে একাধিক ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। শিপিং এজেন্টের অযাচিত চার্জ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জবাবদিহিতামূলক সভা মাসিক প্রশ্নোত্তর পর্ব পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেন।
সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস্ সিএন্ডএফ এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, লাইসেন্সিং বিধিমালার বৈষম্যমূলক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। সিএন্ডএফ কমিশনের ওপর উৎসে কর্তিত করকে চূড়ান্ত করদায় গণ্য করা, কাস্টমস আইনের কতিপয় ধারা সংশোধনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি নিজেদের মধ্যে সকল বিভাজন দূর করে সিএন্ডএফ ব্যবসা সুরক্ষার জন্য একসাথে কাজ করার আহবান জানান।
সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য দেন মো. হানিফ, মো. আহসান, মো. মুস্তফা কামাল আখতার, মো. দেলোয়ার হোসেন, সাধন কান্তি বড়ুয়া, মো. নজরুল ইসলাম, মো. আবদুল করিম, খন্দকার লতিফুর রহমান আজিম, কাজী আবদুল মাবুদ, মো. শফিকুর রহমান, এম এ আজিজ হাওলাদার, মো. এনামুল হক চৌধুরী, মো. রাকিবুল আমিন ভুইয়া, মো. এনামুল কবির বাচ্চু, এস এম খায়রুল আমান। বক্তারা সিএন্ডএফ ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো সমাধানে এসোসিয়েশনকে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের উপর জোর দেন।
অর্থ সম্পাদক মুক্তার হোসেন পাটোয়ারী উত্তাপিত ২০২৪ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদন এবং ২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট সভায় অনুমোদন করা হয়। এছাড়া সভায় কল্যাণ তহবিল পরিচালনা কমিটিতে দুই জন সদস্যকে মনোনীত এবং তিন সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৫ সালের হিসাব নিরীক্ষার জন্য অডিটর নিয়োগের দায়িত্ব কার্যনির্বাহী পরিষদকে দেওয়া হয়। নবগঠিত উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করা হয়। সভায় উপদেষ্টা মন্ডলী, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ফেডারেশন সহ বিভিন্ন এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি