নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস কার্যালয় অভিমুখে আগামী সোমবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নগরীর দুই নম্বর গেটে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজাহার। এসময় তিনি বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েল ও ভারত যৌথ চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেন।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনিদের ফাঁসি ও ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে হেফাজত ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর। নগরের জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদের সামনে জুমার নামাজের পর জড়ো হন সবাই। সেখান থেকে মিছিল সহকারে দুই নম্বর গেট এলাকায় গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মুফতি হারুন ইজাহার বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটি থেকে বিদায় করার পর এদেশের বেশিরভাগ হিন্দু সংগঠন ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা ইসকনসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে বলে দিতে চাই, আগামীতে আলাদাভাবে আপনাদের সঙ্গে বসতে রাজি নই। হাসিনা সরকারের পতনের পর আমাদের দেশের অনেকেই হিন্দুদের মন্দির পাহারা থেকে শুরু করে সুরক্ষার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। অতি উদারতা দেখাতে পূজামন্ডপেও গিয়েছিল অনেকে, যেটা আমরা সমর্থন করি না। এত উদারতা দেখানোর পরও তারা আমাদের ভাইকে জবাই করে খুন করল। কেন, এমন বর্বরতা দেখাচ্ছে?’ কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনার (সহকারী) অফিস অভিমুখে আমাদের লংমার্চ হবে। আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। ওই সমাবেশে আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না। আমরা কোনো পাটকেল নিক্ষেপ করবো না। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ছাত্র সমন্বয়ক ও সরকারকে জানিয়ে দেব যে, আমরা ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে শান্তিপূর্ণ যাত্রা করব। শান্তিপূর্ণ দূরত্বে থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি দেবেন।’
হিন্দু সংগঠনের নেতাদের তিনটি শর্ত পূরণের আহবান জানিয়ে মুফতি হারুন ইজাহার বলেন, ‘এখন যদি কোনো হিন্দু সংগঠন আমাদের সঙ্গে বসতে চায় তাহলে প্রথম শর্ত হলো তাদের ভারতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার যেসব ভুয়া প্রোপাগান্ডা হয়েছে, সেসবের ব্যাপারে তাদের অবস্থান অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে। তাদের বলতে হবে বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদ আছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণের যে খবর প্রচার করেছে, সে কথা মিথ্যা ও ভুয়া, এটা বলতে হবে। আমার তিন নম্বর শর্ত হলো আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে ঘাপটি মেরে থাকা বিভিন্ন জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও গুন্ডা রয়েছে। তাদের বহিষ্কার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এ তিনটি শর্ত পূরণ না হওয়া ছাড়া আমরা আপনাদের সঙ্গে ডায়ালগে বসবো না। কোনো ইসলামিক দল যদি ডায়ালগে বসে তারা মোনাফেক হিসেবে চিহ্নিত হবে।’
মুফতি ইজাহার বলেন, ‘আমাদের মূল লড়াই কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের সঙ্গে নয়। এমনকি আমাদের মূল লড়াই বাংলাদেশের ইসকন, সনাতনী মহাজোটসহ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গেও নয়। আমাদের লড়াই দিল্লির সঙ্গে। দিল্লি বাংলাদেশে কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে। কুকুরের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া নেই। যারা ওই কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে বোঝাপড়া সে দিল্লির সঙ্গে হবে। আমরা আমাদের লড়াইকে দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই।’
সমাবেশের আগে বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ শেষ করে মুসল্লিরা জমিয়তুল ফালাহর সামনে জড়ো হন। মিছিল থেকে ‘ইসকনের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও, ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান, দিল্লি না ঢাকা; ঢাকা ঢাকা, সাইফুল ভাইয়ের রক্ত; বৃথা যেতে দেবো না, ইসকন জঙ্গি; ফ্যাসিবাদের সঙ্গী’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।