এতেকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ আমল

1

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

এতেকাফ অর্থ কোন স্থানে অবস্থান করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, যে মসজিদে পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়, এমন মসজিদে এবাদতের উদ্দেশ্যে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন এতেকাফ পালন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লাবাসীর পক্ষে যেকোন একজন এতেকাফ পালন করলে মহল্লার সবার পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে।
এতেকাফ মূলত একাকিত্বভাবে এক ধ্যানে আল্লাহর এবাদত বন্দেগীতে মশগুল হওয়া। পূর্বেকার নবীর উম্মতগণ সারাজীবন ইবাদত বন্দেগী করেও যে ফল বা পূণ্য অর্জন করতে পারেনি, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উসিলায় তাঁর উম্মত মাত্র কয়দিনের এবাদতের মাধ্যমে সে ফল লাভ করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে এতেকাফের মাধ্যমে বান্দা নির্দিষ্ট দিনসমূহে দুনিয়ার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে একাকীত্বের জীবন ধারণ করে শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মগ্ন হয়। ফলে আল্লাহর প্রেমে বান্দার হৃদয়ের বন্ধন দৃঢ় হয়। একাগ্রচিত্তের এ সাধনা সারা বছরের এবাদত থেকে উত্তম বলে গণ্য হয়।মানুষের মধ্যে থাকা নাফ্সে আম্মারার স্বভাবজাত ক্রিয়া হচ্ছে তাকে সদা-সর্বদা খারাপ কাজের দিকে ধাবিত করা। হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ, অহংকার, ঔদ্ধত্য ও উম্মত্ততার মতো পাশবিক ক্রিয়ার দিকে টানা, যাতে বান্দা আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল হয়ে যায়। নফ্সে আম্মারার দাবিকে অগ্রাহ্য করে তাকে শাস্তি দেয়ার নিমিত্তে দুনিয়ার সমস্ত আনুষঙ্গিক কার্যাদি পরিত্যাগ করে নিজ আত্মীয় স্বজন-পরিজনের মায়া ত্যাগ করে একমাত্র স্রষ্টা দয়াময় প্রভু আল্লাহর প্রেমে ডুবে যাওয়াই এতেকাফ।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণিত হাদিসে আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ওফাত দান করা পর্যন্ত এ নিয়ম পালিত হতে থাকে। তাঁর ইন্তিকালের পর তার সহধর্মিনীগণ এতেকাফ করতেন।
সৌভাগ্যবান আল্লাহর বান্দাগণ ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ উদয় হওয়া পর্যন্ত মসজিদে এতেকাফ পালন করবেন। অনেক ধর্মপ্রাণ মহিলাও নিজ ঘরের একটি পৃথক কক্ষে দুনিয়ার সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এতেকাফ পালন করছেন। রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ পালনের আরও একটি বিশেষ কারণ হলো কদরের মাহাত্মময় রাত অন্বেষণ বা এ রাতের ফজিলত অর্জন করা।
এতেকাফকারী রাতে এবাদত বন্দেগীতে কাটানোর ফলে রমজানের শেষ দশকে নিহিত বিজোড় রাতসমূহে মহাফজিলত মন্ডিত লাইলাতুল কদর রাত ও এর ফজিলত লাভে ধন্য হয়।
যেসব রোজাদার মুসলমান নর-নারী এতেকাফ পালন করতে পারেন না, তাদের উচিৎ রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতসমূহে এবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে মহাপূণ্যময় লায়লাতুল ক্বদরের ফজিলত লাভে সচেষ্ট হওয়া।
উল্লেখ্য, মহিলাগণ নিজের ঘরে নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনও স্থান না থাকলে ঘরের কোনও একটি কোণে এতেকাফ আদায় করবেন। আল্লাহ আমাদের এ মহাপূণ্যময় এবাদত করার তৌফিক দিন। আমিন।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক তরজুমান