এডিবির ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

1

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কর্তৃক বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক প্রকল্প বিশেষ করে ফসিল ফুয়েল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) প্রকল্পে বিনিয়োগের বিরোধিতা করেছে পরিবেশ সচেতন নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামেও বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) এবং বিডাবিøউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট) এর সমন্বিত উদ্যোগে এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সভার পূর্বে জ্বীবাশ্ম স্বালানীতে বিনিয়োগ না করার দাবিতে চট্টগ্রামে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ২৯ এপ্রিল নগরীর কর্নফুলী মইজ্যাটেকে অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সভায় উপরোক্ত দাবি জানানো হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এডিবি এখন পর্যন্ত ২৮৮৪.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৪.৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৮২.৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে, মাত্র ২.৫৫ শতাংশ সৌরবিদ্যুতে, এবং বায়ুশক্তিতে কোনো বিনিয়োগই করা হয়নি। জীবাশ্মভিত্তিক প্রকল্পে প্রতি মেগাওয়াটে ২.০৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হলেও, সৌরবিদ্যুতে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার।
চট্টগ্রাম ফোরাম অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য ও অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর বলেন, এডিবি খুলনার ১৫০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্টে উন্নীত করতে অতিরিক্ত ১০৪.১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ গত ১১ বছরে এই প্রকল্পের পেছনে সরকারকে ১,৮২৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। তবুও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকায় প্রকল্পটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ক্যাব কর্ণফুলী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদরতুল মুনতাহা বলেন, যখন বিশ্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন এডিবির এই ধাচের বিনিয়োগ জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে এবং বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। ক্যাব কর্ণফুলী উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ জরুরি। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, পরিবেশ ও সমাজকেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা এডিবিকে আহŸান জানান, অবিলম্বে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগের দিকে অগ্রসর হতে। আয়োজকরা জানান, ৫৮তম এডিবি বার্ষিক সভার প্রাক্কালে এ ধরনের প্রতিবাদী কার্যক্রম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে, যাতে এডিবি ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের বিনিয়োগ নীতিতে জলবায়ু ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়। আলোচনা ও প্রচারাভিযানে অন্যদের মধ্যে আলোচনা অংশ নেন আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা রইসুল ইসলাম, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট চট্টগ্রামের মেন্টর রাসেল উদ্দীন, যুব ক্যাব কর্ণফুলী উপজেলা সভাপতি আরফিন সুমন, যুব গ্রæপের সদস্য জহির উদ্দীন হিমেল, সাজ্জাদ হোসেন রনি, ডলি আক্তার, ইমতিয়াজ হোসেন মিরাজ, সাদিয়া জাহান সিথী, জাহেদুল ইসলাম, মুহিবুল ইসলাম মুহিব প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি