এক যুগ পর মা-বাবা জানলেন ছেলে মিয়ানমারের কারাগারে

14

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় মারা গেছেন এমন মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার এক যুগ পর মা ও বাবা জানতে পারলেন তাদের সন্তান মারা যায়নি। পুরো এক যুগ ধরেই মিয়ানমারের কারাগারে বন্দী আছেন। মূলত অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমার অভ্যন্তরে সাগরদ্বীপে আটক হন তাদের সন্তান। তারপর থেকেই দেশটির কারাগারে বন্দী তিনি। যদি ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ছেলের জন্য দোয়া অনুষ্ঠানও করেছিলেন তারা।
ঘটনাটি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাদ্রাসা পাড়ার শাহাবউদ্দিন প্রকাশ বাবুল-রাজিয়া দম্পতি ও তাদের বড় সন্তান শাহজাহানকে নিয়ে।
দীর্ঘ একযুগ পুত্র শোকে কাতর শাহাব উদ্দিন জানান, গত রমজান মাসে এক মিয়ানমার নাগরিক আচমকা আমাদের ঘরে আসেন। তিনি নিজেকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন রাজ্যের বাসিন্দা আব্দুর রহমান পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি আমাদের সন্তান শাহজাহানের খবর নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের মলাবাইন দ্বীপ কারাগারে আমার ছেলের সাথে তিনিও কারাবন্দী ছিলেন। সেখানে পরিচয় হয় শাহজাহানের সাথে এবং শাহজাহান তার দীর্ঘ কারাগার জীবনের ঘটনা তাকে জানান।
দু’জনের কথার ফাঁকে মিয়ানমারের নাগরিক আব্দুর রহমান বলেন, তিনি ব্যবসায়ী কাজে বাংলাদেশের টেকনাফে যান। এ কথা শুনে শাহজাহান তার কাছে অনুরোধ করেন, কারাগার থেকে মুক্তির পর কোনো সময় পুনরায় বাংলাদেশে গেলে তার পরিবারকে যেন সে কারাগারে আছে- এই সংবাদটি দেন। এর জন্য শাহজাহান আব্দুর রহমানকে তার ঘরের ঠিকানা এবং পরিবারের সদস্যদের তথ্য দেন।আব্দুর রহমান মুক্তি পান। পরে গত রমজান মাসে ব্যবসায়িক কাজে বাংলাদেশে এলে শাহজাহানের দেয়া তথ্য মতে তার বাড়িতে যান। নিজের পরিচয় দিয়ে শাহজাহানের কারাগারে থাকার তথ্যটি পরিবারের সদস্যদের জানান তিনি।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর মৃত ছেলে বেঁচে থাকার সংবাদটি আব্দুর রহমানের মুখ থেকে শুনার পর মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা আবেগ আপ্লুত ও হতবাক হন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য মা-বাবা মিয়ানমারের এই নাগরিককে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং তার দেয়া উত্তরে নিশ্চিত হন তাদের ছেলে বেঁচে আছেন।
মিয়ানমার নাগরিক আব্দুর রহমান চলে যাওয়ার সময় তাকে তাদের মোবাইল নাম্বার দেন এবং তার মোবাইল নাম্বারও নেন। সম্ভব হলে কারাগারে ছেলের কাছে নাম্বারটি পাঠানো এবং সুযোগ হলে ছেলেকে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় আব্দুর রহমানের মোবাইলে কল দিলেও সংযোগ পাননি। হয়ত তার দেয়া নাম্বারটি বাংলাদেশের মোবাইল নাম্বার ছিল। তার চলে যাওয়ার পর থেকে তারা আশায় বুক বেঁধেছেন তাদের সংসারে চার সন্তান এক কন্যার মধ্যে সবার বড় শাহজাহান তাদের বুকে ফিরে আসবেন।
১৩ বছর পর পুত্র শোকে কাতর শাহাবুদ্দিন ও রাজিয়া দম্পতি ছেলে বেঁচে থাকার সংবাদ পেয়ে শুকরিয়া আদায় করছেন। তাদের পরিবারে অপ্রত্যাশিত খুশীর বন্যা বইতে শুরু করে। তাদের আশা তাদের সন্তান একদিন ফিরে আসবে।
স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আকুতি জানিয়ে তাদের ছেলেকে দেশে ফেরাতে যাতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক এবং পরিবারের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে হবে। যুবকটি দেশিয় নাগরিক হলে আবেদনের ভিত্তিতে তাকে দেশে ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।