ওয়াসিম আহমেদ
ছয়টি জোনে ভাগ হবে পুরো নগর। প্রতিটি আঞ্চলিক জোনে একজন প্রশাসনিক প্রধানের নেতৃত্বে সব ধরনের নাগরিক সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ১২ বছর আগে সরকারের এমন প্রজ্ঞাপন থাকলেও ‘একচেটিয়া খবরদারি’ প্রবণতার কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬টি আঞ্চলিক জোনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, ‘নগরবাসীর সেবা পাওয়ার অধিকারকে প্রাধান্য দিতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৬টি আঞ্চলিক জোনে ভাগ হয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রতিটি আঞ্চলিক জোন থেকে চসিকের সব সেবা নেওয়া যাবে। সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি আঞ্চলিক জোনে থাকবেন। তাই প্রাথমিক সব কাজ আঞ্চলিক জোন থেকে পরিচালিত হবে।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নগরের ৪১ ওয়ার্ডকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করা হবে। প্রতিটি অঞ্চলের আওতায় আলাদা আলাদা প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব ও প্রশাসন শাখা থাকবে। ৬ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্চলগুলোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের কর্মকর্তা মন্ত্রণালয় প্রেষণে না দিলে ৩জন বিসিএস কর্মকর্তা দিয়ে জোনগুলোর কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথক অঞ্চল হলেও স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) অ্যাক্ট অনুযায়ী মেয়র বা প্রশাসকের যে ক্ষমতা তা খর্ব হবে না। বরং বিকেন্দ্রিকরণ হলে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কাজে গতি আসবে। একইসঙ্গে দুর্ভোগ কমবে সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের। তারা নিকটস্থ আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকেই কাঙ্খিত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে অঞ্চলগুলোতে ৬ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা পদায়নের জন্য গত সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে ২০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে চসিকের ওয়ার্ডগুলোকে অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করেছিল। তবে গত ১২ বছরেও তা কার্যকর হয়নি।
সর্বশেষ গত ৫ অগাস্ট পুরাতন পরিষদ বিলুপ্ত এবং চসিকে প্রশাসক নিয়োগের পর নাগরিক সেবা নিশ্চিতে অঞ্চল গঠনের বিষয়টি সামনে আসে। এক্ষেত্রে কাউন্সিলর না থাকার বিষয়টিকেই আমলে নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসক নিয়োগের সাথে সাথেই পুরাতন পরিষদ বিলুপ্ত হয়েছে বিধায় বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনে কাউন্সিলর না থাকায় ওয়ারিশান সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রদানসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সচল রাখার লক্ষ্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ জরুরি।
প্রাথমিক ভাবে নির্ধারিত অঞ্চল ভিত্তিক এলাকাগুলোর মধ্যে এক নম্বর অঞ্চলে রয়েছে চসিকের ১, ২, ৩, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড। অঞ্চলভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে দক্ষিণ পাহাড়তলী, জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলী, কুলগাঁও, জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, পশ্চিম ষোলশহর, শোলকবহর, মুরাদপুর (অংশ), প‚র্ব নাসিরাবাদ ও খুলশী। দুই নম্বর অঞ্চলে রয়েছে ৪, ৫, ৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ৩৫ নং ওয়ার্ড। অঞ্চলভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে চান্দগাঁও, চর রাঙামাটিয়া, মোহরা, চরমোহরা, পূর্ব ষোলশহর, বাকলিয়া, পাথরঘাটা (অংশ) ও আন্দরকিল্লা (অংশ)। তিন নম্বর অঞ্চলে রয়েছে ১৪, ১৫, ১৬, ২০, ২১, ২২, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ড। অঞ্চলভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে লালখানবাজার, দক্ষিণ পাহাড়তলী (অংশ), উত্তর পাহাড়তলী, খুলশী, জয়পাহাড়, আলম শাহ, কাঠগড়, ইমামগঞ্জ, চন্দনপুরা, নিজশহর, কাসিমবাজার, মুরাদপুর (অংশ), রুমঘাটা, আন্দরকিল্লা, রহমতগঞ্জ, দক্ষিণ পাহাড়তলী, এনায়েতবাজার, বটতলী, ফিরিঙ্গীবাজার, গুরিবাজার, মনোহরখালী, পাথরঘাটা (অংশ), সুজা কাঠগড়। চার নম্বর অঞ্চলে রয়েছে ২৩, ২৪, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড। অঞ্চলভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ আসকারবাদ, গোসাইলডাঙ্গা, মোগলটুলি, মাদারবাড়ি, মগবাজার ও নলসা। পাঁচ নম্বর অঞ্চলে রয়েছে ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ড। অঞ্চলভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে উত্তর পাহাড়তলী, লট ৯ পাহাড়তলী, প‚র্ব পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পশ্চিম নাসিরাবাদ, দক্ষিণ পাহাড়তলী (অংশ), রামপুর ও উত্তর হালিশহর। ছয় নম্বর অঞ্চলে রয়েছে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং ওয়ার্ড। অঞ্চলটির আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা ও পূর্ব পতেঙ্গা।
উল্লেখ্য, ৫৪ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ৭৫ ওর্য়াড নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেও ১০টি করে অঞ্চল আছে।