আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিল, এক যুগ পর তা বাতিল করে দিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আপিল শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেয়।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল। আর এর মধ্য দিয়ে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলল ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সামনে। খবর বিডিনিউজ’র
রায়ের পর এক ফেইসবুক পোস্টে শুকরিয়া জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। নির্বাচন কমিশন যেন দ্রুত নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়, সেজন্য আল্লাহর ‘সাহায্য’ চেয়েছেন তিনি।
এ মামলায় জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম।
রায়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিশির মনির বলেন, “দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের আইনি লড়াইয়ের সফল অবসান হল। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তার নিবন্ধন ফিরে পেল।”
তিনি বলেন, “পলিটিক্যালি মোটিভেটেড পিআইএল বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, এই রায়ের পরে বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সকলেই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বেছে নেবেন- এটা আমরা প্রত্যাশা করি। আমরা এটাও প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং এবং কনস্ট্রাকটিভ বিতর্ক হবে, যার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে।”
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মনির বলেন, “আজকে মাননীয় আপিল বিভাগ- হাই কোর্টের যে রায় ছিল, এই রায়কে বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং ইলেকশন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন এবং অন্য যেসকল ইস্যু ইলেকশনের সামনে আছে বা আসবে, সেগুলো যেন দ্রুতই নিষ্পত্তি করেন। এরই মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেল এবং প্রতীকের ব্যাপারটিও ইলেকশন কমিশনের কাছে রেফার করা হলো- আদার ইস্যু হিসাবে। এইজন্য আমরা মামলার শর্ট অর্ডার চেয়েছি, আমরা আশা করি- আগামীকালকের (আজ) মধ্যেই মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা হাতে পাব। এই সংক্ষিপ্ত আদেশ আমরা ইলেকশন কমিশনের কাছে অ্যাপ্রোচ করব, বাকিটা ইলেকশন কমিশন আইন অনুযায়ী অতি দ্রুত জামায়াতের নিবন্ধন এবং জামায়াতের প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন- এইটা আমরা প্রত্যাশা করি।”