নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও লবণ উৎপাদন বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। এ লক্ষ্যে সন্দ্বীপের চরাঞ্চলে লবণ শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ২০১২ সালে হাতে নেয়া প্রকল্পটি জমি সংকটের কারণে এক যুগেও আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর বিসিকের একজন পরিচালক প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসার কথা থাকলেও আসেননি। যে কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, পটিয়া ও আনোয়ারার পর সন্দ্বীপেও লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে সন্দ্বীপের বিলুপ্ত লবণ শিল্পে পুনরায় প্রাণ ফিরবে।
বিসিক চট্টগ্রামের উপ-মহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘২০১২ সালে সন্দ্বীপে লবণ শিল্প পার্ক স্থাপনের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। জমিসহ নানা জটিলতার কারণে যথাসময়ে প্রকল্পটি হয়নি। সম্প্রতি প্রকল্পটি গতি পেলেও সরকার পাল্টানোর পর প্রকল্পটি নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ইতোমধ্যে একজন ডাইরেক্টর প্রকল্প এলাকায় আসার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। সন্দ্বীপে লবণ শিল্প পার্ক হলে সেখানে লবণ উৎপাদন হবে। এতে চট্টগ্রামে লবণ উৎপাদন আরও বাড়বে। এখন চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা ও পটিয়ায় লবণ উৎপাদন হচ্ছে’।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় সন্দ্বীপে লবণ শিল্প পার্কটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলেও মূলত ২০১৯ সালে প্রকল্পটি গতি পায়। ২০১৯ সালের ২০ মার্চ এ শিল্প পার্ক স্থাপনে ২৫ হাজার একর জমি বরাদ্দ ও চিহ্নিত জমির তথ্য চেয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয় তৎকালীন বিসিক চেয়ারম্যান। চিঠিতে লবণ শিল্প পার্ক স্থাপন উপযোগী জায়গা চিহ্নিত করার পাশাপাশি চিহ্নিত জমির অবস্থা, মৌজা ম্যাপ, মৌজা রেট, জমির শ্রেণি, স্কেচম্যাপের তথ্য চাওয়া হয়। এ চিঠির সূত্র ধরে একই বছরের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ জমি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, বিসিক থেকে ২৫ হাজার একর জমি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সে চিঠি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে দেখা যায়, যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে বেজা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যে কারণে বিসিককে জায়গা দেয়া হয়নি।
বিসিক জানায়, কক্সবাজারে একসময় প্রচুর লবণ হতো। এখন সেখানে নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ায় প্রায় ২০ হাজার লবণ মাঠ কমে গেছে। এই লবণ মাঠ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমছে। যে কারণে একসময় লবণ উৎপাদনে এগিয়ে থাকা সন্দ্বীপকে বেছে নেয়া হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণ ও ডেমোনেস্ট্রেকশন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। এই লবণ শিল্প পার্কটি হবে আধুনিক, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব। ইতোমধ্যে স›দ্বীপের মুছাপুর ইউনিয়নকে এই লবণ শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য উপযোগী জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তা বেশিদূর আগায়নি।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘লবণ শিল্প পার্ক স্থাপনের বিষয়ে জায়গা সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমার সময়ে আসেনি। আগে আসলে সেটি আমি জানবো না। আপাতত এ সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।’