এক প্রস্তাবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের দাবি বেড়ে ১৫ দফা

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার-বহির্ভূতকরণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের কারণে অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূতকরণ ও শিক্ষা কমিশনের আওতায় নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে ক্যাডার-বহির্ভূতকরণের অশুভ প্রচেষ্টা প্রতিরোধকল্পে এবং শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। খবর বাংলানিউজের।
স¤প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিলুপ্তি বিষয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. রুহুল কাদির, প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল প্রফেসর সৈয়দ মইনুল হাসান, প্রফেসর মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ২৫টি ক্যাডারের সংগ্নঠন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতৃবৃন্দ শিক্ষা ক্যাডারের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
ক্যাডার বহির্ভূতকরণের উদ্যোগ প্রতিহত করতে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যগণ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুত বলে জানানো হয়। সংস্কার কমিশন শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্তির কথা প্রচার করে ক্যাডার সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলেও নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। তারা কমিশনকে ক্যাডার বহির্ভূতকরণের উদ্যোগ থেকে সরে আসার বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের সবার জানা উচিত, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬১ সালে বেসামরিক জনগণ বা সিভিল-নাগরিকদের প্রাপ্য সেবা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) গঠিত হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিপিএস) গঠিত হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে প্রশাসন, কৃষি, স্বাস্থ্য, পুলিশসহ বিভিন্ন সার্ভিস সেক্টরের মতো এডুকেশন সার্ভিসও বরাবর সিভিল সার্ভিসের অংশ ছিল। স্বাধীনতা পূর্বকালের সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তানের অন্তর্গত ইস্ট পাকিস্তান সিনিয়র এডুকেশন সার্ভিস ও ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র এডুকেশন সার্ভিস স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর অনিবার্য অংশ হিসাবে জেনারেল এডুকেশন ও টেকনিক্যাল এডুকেশন ক্যাডার নামে দুটি শাখায় আত্মপ্রকাশ করে। বিসিএস কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস ১৯৮০-তে বিষয়টি স্পষ্ট করা আছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, শত বছরের ঐতিহ্যকে অগ্রাহ্য করে একটি বিশেষ মহলের চক্রান্তে গত ৪ দশক ধরে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সকল সম্ভাবনা ও বিকাশের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সুতরাং নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বার্থে, মহান শিক্ষকতার পেশায় মেধাবীদের আকর্ষণ করার জন্য, বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার নীল নকশা থেকে সরে আসতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেহেতু আমাদের এই দাবিগুলোয় শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের সকল জাতি-উপজাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের নবীন শিক্ষার্থীদের আশা-আকাক্সক্ষা জড়িয়ে আছে এবং জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখানো চাকরি প্রত্যাশী একদল মেধাবি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে তাই আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আশা করছি, আমাদের সকল দাবি ২৯ তারিখের মধ্যে মেনে নেওয়ার জন্য। এর কোনো ব্যত্যয় হলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে পেশাগত বৈষম্য হতে রক্ষার জন্য আমরা আগামী ৩১ ডিসেম্বর তারিখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবো।