একুশের শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে গত ২১ ফেব্রæয়ারি পালিত হয়েছে ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। অমর একুশের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মহান শহীদ দিবসের কর্মসূচি। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দেওয়া মহান ভাষা শহীদদের।
অমর একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। দিনব্যাপী ছিল আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন।

সিটি কর্পোরেশন : সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বিজয়ের এত বছর পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাত ১২টা ১ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ কর্মকর্তারা।
মেয়র বলেন, বিজয়ের এত বছর পরও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বিভিন্ন দোকান, বিভিন্ন শপিং সেন্টারগুলো দেখা যাচ্ছে ইংরেজি নামফলক। যেহেতু সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স দেয় সেহেতু এসব বাংলা ভাষায় যাতে করা যায় এ ধরনের একটা উদ্যোগ আমরা নিতে পারি।

জেলা প্রশাসন : ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম এর আয়োজন এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন এবং সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ সুমসৃণ করে।
চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় প্রদর্শিত বিলবোর্ড, পোস্টার ও সাইনবোর্ডে ইংরেজির বহুল ব্যবহার ও বাংলা ভাষার অপব্যবহার দেখা যাচ্ছে। এসময় তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচলন ও এর অপব্যবহার বন্ধের আহবান জানান।
আলোচনা সভায় উপস্থিত বিশেষ অতিথি ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ মো. আহসান হাবীব পলাশ, ভাষার শুদ্ধ চর্চা ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এ লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় একটি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভাষা আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ, আর তাই শুদ্ধ ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি।
এরপর বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে তার বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তব্যে ঐতিহাসিকভাবে ভাষার সাথে সভ্যতার সম্পর্ক ও ভাষা সংরক্ষণে আর্কাইভ ও গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতিকে যদি উন্নত করতে চাই, আমাদেরকে বিশ্বের সব জ্ঞান বাংলায় অনুবাদ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। তিনি বলেন, ভাষার ব্যবহার যদি বাঁধাগ্রস্ত হয়, সংস্কৃতি বাঁধাগ্রস্ত হবে। তিনি শুধু ফেব্রæয়ারি মাস নয়, সারাবছর শুদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য সকলকে আহবান জানান।
আলোচনা সভা শেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জেলা শিশু একাডেমি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত শুদ্ধ বাংলা বানান, চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন গ্রæপের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ আয়োজন সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ, অতিরিক্ত ডিআইজি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ; চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকবৃন্দ; চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।