একাই ২৮ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া সেই তৌহিদুল গ্রেপ্তার

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেরদিন নগরীতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণকারী এক যুবককে পুলিশ সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর তৌহিদুল ইসলাম নামে ওই যুবকের গুলিবর্ষণের ছবি সেসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। পুলিশের দাবি, ওই যুবক একাই সেদিন ছাত্র-জনতার ওপর ২৮ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছিল।
সাতক্ষীরা সদরের কামালনগর এলাকা থেকে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তৌহিদুল ইসলাম (৩২) আওয়ামী লীগ কিংবা এর সহযোগী কোনো সংগঠনের পদ-পদবিতে আছেন কি না সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হকের অনুসারী। সরকার পতনের পর তৌহিদুল দেশের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় গিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।
নগরীর দামপাড়ায় সিএমপির সদর দপ্তরে গতকাল শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) মো. রইছ উদ্দিন জানান, গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তৌহিদুলকে সাতক্ষীরায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৌহিদুল চলতি বছরের গত ৪ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তিনি একাই সেদিন ২৮ রাউন্ড গুলি করেছিলেন। তিনি একজন পেশাদার সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি মাদক ও ছিনতাইয়ের ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই হত্যা মামলা।
সিএমপির চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফতাব উদ্দিন বলেন, তৌহিদুল যে অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করেছিলেন, সেটি পাকিস্তানের তৈরি একটি ওয়ান শ্যূটারগান। অস্ত্রটি আমরা এখনও পাইনি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। তার রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, দলীয় কোনো পদ-পদবিতে আছে কি না সেটা নিশ্চিত নই। তবে তিনি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হকের অনুসারী। আন্দোলন ঠেকানোর জন্য অস্ত্র নিয়ে তাকে এসরারুলই নামিয়েছিল বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড এবং কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবেও প্রশাসনসহ নানা মহলে তার পরিচিতি আছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতা থেকে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতনের আগমুহুর্তে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দলটির নেতাকর্মীরা আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে নামে। নগরীর নিউমার্কেট মোড়, তিন পোলের মাথা, এনায়েত বাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্নস্থানে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছিল। এসব ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানা ও আদালতে এরইমধ্যে এক ডজনেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে।