একদিনে রেকর্ড ৭৭ জনের মৃত্যু

38

দেশে করোনা ভাইরাসে একদিনে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এ যাবৎ সর্বাধিক। তবে দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত কয়েক দিনের তুলনায় কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শনিবার জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৩৪৩ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দিনে ৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে গত বুধবার রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত এক দিনে ৭৭ জনের মৃত্যুতে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৬১ জন।
এর আগে একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল গত বৃহস্পতিবার। সেদিন ৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ৩ হাজার ৮৩৭ জন। তাদের নিয়ে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১২১টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ৩৪টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৮৮টি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে মিলিয়ে সর্বমোট ২৪৩টি ল্যাবে ২৬ হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৯টি নমুনা।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; তা ৬ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১ এপ্রিল।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৩১ মার্চ তা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৯তম অবস্থানে।
গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ আর নারী ২৪ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন।
মৃতদের মধ্যে ৪৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃতদের মধ্যে ৫১ জন ঢাকা বিভাগের, ১৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন রাজশাহী বিভাগের, ২ জন খুলনা বিভাগের, ১ জন করে ২ জন বরিশাল ও সিলেট বিভাগের এবং ৪ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ হাজার ৬৬১ জনের মধ্যে ৭ হাজার ২২৬ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৪৩৫ জন নারী।
এক সপ্তাহে মৃত্যু ৩০% বেড়েছে : দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, একদিনে এত মৃত্যু মহামারী শুরুর পর আর হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
গত ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মোট ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়। আর ৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল- এই ৭ দিনে মারা গেছেন ৪৪৮ জন।
গত বছরের ৩০ জুন দিনে মৃতের সংখ্যা ৬৪ জনে ওঠে, যা ছিল ওই বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমতে থাকে, নভেম্বর ডিসেম্বরে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও জানুয়ারি থেকে তা কমতে কমতে মার্চের শুরুতে ৫ জনেও নেমে এসেছিল।
কিন্তু এরপর আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ, সেই সঙ্গে মৃত্যুও। কয়েকদিনের মধ্যেই দৈনিক মৃত্যু ৫০ ছাড়িয়ে যায়।
১ এপ্রিল ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ৬ এপ্রিল আগের রেকর্ড ভেঙে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে এই সংখ্যা ৬০ এর নিচে আর নামেনি। ৮ এপ্রিল ৭৪ জনের মৃত্যু ঘটলে নতুন রেকর্ড হয়, গতকাল শনিবার তাও ছাড়িয়ে গেল। এনিয়ে সরকারি হিসাবে মহামারীতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৬১ জন।
এ পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশির বয়স ৬০ বছরের বেশি। শতকরা হিসাবে তা ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, শতকরা হার ৫৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ২ দশমিক ১৫ শতাংশ রোগী মারা গেছেন।
গত এক সপ্তাহে ২ লাখ ২০ হাজার ৮২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৪৮ হাজার ৬৬০ জন। এই সংখ্যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুস্থও হয়েছে বেশি রোগী। সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৪২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।