একটি ভুল, লাখো মানুষের দুর্ভোগ

21

এম এ হোসাইন

নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলাকালে ওয়াসার প্রধান সঞ্চালন পাইপ ফেটে যায়। সোমবার বিকেলে এস্কেভেটরের আঘাতে ৪৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপটি ফেটে যায়। এ পাইপলাইন দিয়ে রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে নগরীতে সরাসরি পানি সরবরাহ করা হয়।
পাইপ ফেটে যাওয়ায় পানি সরবরাহ এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পাইপটির প্রায় ১৬ ইঞ্চির বেশি ক্ষতি হয়েছে এবং দুটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াসা। দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। এতে অন্তত নগরীর ৩০টি এলাকায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পুরো শহরজুড়ে ভয়াবহ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দৈনন্দিন কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এই প্রকল্পের আওতায় কুয়াইশ এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণ করছিল। ঠিক তখনই কাজের সময় ব্যবহৃত এস্কেভেটরের আঘাতে ওয়াসার মূল পাইপ ফেটে যায়। এতে কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে নগরীতে পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
ওয়াসার তথ্যমতে, কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ প্রতিদিন প্রায় ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করত। এখন এক ফোঁটাও পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ হালিশহর, আগ্রাবাদ, লালখান বাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন মোড়, জামালখান, জিইসি, কদমতলী, ধনিয়ালাপাড়া, নয়াবাজার, আনন্দবাজার, রুবি গেট, হিলভিউসহ অন্তত ৩০টি এলাকায় পানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় পুরো নগরীতে হাহাকার পড়ে গেছে। এমনিতেই নগরীর অনেক এলাকায় সপ্তাহে এক-দুই দিন পানি পাওয়া যায়। এখন তাও বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সোমবার বিকেল থেকে পানি নেই। অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু দুইদিনেও পানি আসেনি। ডিপ-টিউবওয়েলের পানি দিয়ে এখন কাজ সারতে হচ্ছে। ডিপের পানিতে আয়রন আছে। কখন পানি আসবে সেটাও বলতে পারছে না কেউ।
হারিশহর এলাকার গৃহিণী রুবি আক্তার বলেন, সোমবার রাতে দেখি পানি নেই। দুই দিন হয়ে গেলো, এখনো পানি আসেনি। কখন আসবে তাও নিশ্চিত হতে পারছি না। প্রচন্ড কষ্টে রান্নাসহ যাবতীয় কাজ সারতে হচ্ছে।
এদিকে দৈনন্দিন কাজ সারতে নগরীর অনেক বাসিন্দা গভীর নলক‚প থেকে পানি তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানেও পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। অনেকে দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে কোনোভাবে দিন পার করছেন। এতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন,প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম পাইপ এক জায়গায় ফেটেছে। একদিনের মধ্যে মেরামত করা যাবে। কিন্তু কাজের সময় দেখা গেল, ক্ষতি হয়েছে দুই জায়গায়। ফলে পুরো পাইপটাই বদলাতে হবে। এটি আরও সময়সাপেক্ষ। বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে আনুমানিক ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। তাছাড়া দৈনিক ৪৫ লাখ টাকার পানি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ক্ষতিপুরণ দাবি করে চিঠি দিয়েছি।
নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন কাজের ফলে বারবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের কাজের আগে ভ‚গর্ভস্থ পাইপলাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সঠিক নকশা যাচাই করার আহবান জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ। তাছাড়া পানি সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন অনেকে।
এদিকে, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অনন্যা আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ঠিকাদার কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত সঞ্চালন পাইপলাইনের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। প্রকল্প পরিচালকের কাছে গতকাল ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আমিন স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, সোমবার দুপুর ১২টায় অনন্যা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে এভারকেয়ার হসপিটালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওয়াসার কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ থেকে আসা ১২০০ মি. মি. ব্যাসের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন সিডিএ’র ঠিকাদার কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে রাঙ্গুনিয়াস্থ কর্ণফুলী পানি শোধনাগার-১ হতে শহরে পানি সরবরাহ সম্পুর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বৃহত্তর হালিশহর আগ্রাবাদ, জামালখান, লালখানবাজার, মাদারবাড়ি, জিইসি, মুরাদপুর, কদমতলি, ধনিয়ালা পাড়া, নয়াবাজার, ২ নং গেইট, বায়েজিদ, অক্সিজেন, চকবাজার, নন্দনকানন, সিরাজ-উদ-দৌলা রোড প্রভৃতি এলাকায় পানি সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে শহরে পানি সংকটের কারণে জনমনে অসন্তোষ ও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ওয়াসার বিপুল পরিমাণ পানির অপচয়ের কারণে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সমিশন পাইপলাইনটি মেরামত করতে আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। পাইপ মেরামত করে পুনরায় চালু করা পর্যন্ত আনুমানিক ২৪ ঘণ্টা পানির উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এতে খরচ হবে প্রায় ৪৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। পাইপলাইনটি দ্রুত মেরামত জরুরি বিধায় খরচ বাবদ মোট ৬৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুকূলে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
ক্ষতিগ্রস্ত পাইপ মেরামতে ২৪ ঘন্টার বেশী সময় প্রয়োজন হলে দৈনিক পানির রাজস্ব বাবদ ক্ষতি ৪৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা হারে বৃদ্ধি পাবে, এমনটা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।