একজন কিংবদন্তি বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা

4

মুহাম্মদ রেজাউল করিম

ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী, মুক্তি যুদ্ধচলাকালীন BLF কমান্ডার, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া থানা, বিশিষ্ট ডাক্তার, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রি কলেজ, সাবেক রেজিস্ট্রার ও লেকচারার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, সাবেক ট্রেজারার বিজিসি ট্রাস্ট, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম। অত্যন্ত মার্জিত, রুচিশীল ভদ্র ব্যবহারের এই মানুষটির বয়স এখন প্রায় আশির কাছাকাছি হলেও চলনে-বলনে এখনো উনি অনেক স্মার্ট। এই বয়সে উনার চলাফেরায় গতিশীলতা দেখলে যে কেউ চমকে উঠতে বাধ্য। মাশাল্লাহ ধর্মকর্ম পালনের দিক দিয়েও ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী সাহেব শতভাগ এগিয়ে। আমি কলেজে যোগদান করার পর থেকেই উনাকে দেখে আসতেছি একজন পাক্কা পরহেজগার লোক হিসেবে। যখনই মসজিদের আজান হয় সাথে সাথে উনি মসজিদের দিকে দৌড় দেন জামাতে নামাজ পড়ার জন্য। আমাদের কলেজটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল করিম স্যারের নেতৃত্বে পাঁচ আলোকিত মানুষের সমন্বয়ে। তন্মধ্যে ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন অন্যতম। কলেজের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত শিক্ষাগুরু ড.আব্দুল করিম স্যারের নির্দেশে আমাদের কলেজে প্রতি বছর কলেজ ম্যাগাজিন ‘মনীষা’ বের হয়। মনীষায় ডা. আবু ইউসুফ সাহেব ধারাবাহিকভাবে সেই ২০০৫ সাল থেকেই মুক্তযুদ্ধকালীন সময়ে উনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে ‘একাত্তরের উত্তাল দিনগুলি’ শিরোনামে স্মৃতিচারণ মূলক একটা লিখা এখনো লিখে যাচ্ছেন। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধকালীন সময়ে ডা. ইউসুফ সাহেব তার সহযোগীদের নিয়ে কিভাবে যুদ্ধ করেছিলেন পুখাংনুপুংখভাবে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছেন উনার লেখনিতে। এতদিন পাঠ্যবই এর বাহিরে আমার অন্য কোন বই খুববেশি পড়ার অভ্যাস ছিলনা বলে ডা. সাহেবের ধারাবাহিক লেখাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে কখনো আমার পড়া হয় নি।ইদানীং আমি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। তাছাড়া এখন হাতে সময় সুযোগ থাকা সাপেক্ষে দুই একটা বইও পডার চেষ্টা করছি। তো হঠাৎ করে সেদিন আমার বাসায় বুকসেল্ফে থাকা কলেজ ম্যাগাজিন ‘মনীষা’ এর দিকে আমার চোখ পড়লো। একটা বই হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতেই ডা. সাহেবের ‘একাত্তরের উত্তাল দিনগুলি’ এই শিরোনামে লেখাটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়। সাথে সাথে আমি লেখাটি পড়া শুরু করলাম।লেখাটি পড়তে পড়তে আমি যতই ভিতরে যাচ্ছিলাম ততই আমি যেন হারিয়ে যেতে থাকলাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সেই উত্তাল দিনগুলোতে।এইভাবে ডাক্তার সাহেবের ধারাবাহিক অনেকগুলো লেখা সেইদিন আমি একনাগাড়ে পড়ে ফেললাম। আমিতো মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম। তাই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ডাক্তার সাহেবের বর্ণনাকৃত ঘটনাগুলো আমার শরীরে যথেষ্ট শিহরণ জাগিয়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার সাহেব মেডিকেল কলেজে পঞ্চম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব স্থানীয় পদে আসীন থাকার সুবাদে কিভাবে সেইদিন মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছেন এবং দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে কোথায় কিভাবে যুদ্ধ করেছেন সব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন উনার লিখনিতে। আমি যতই উনার লেখাগুলো পড়ছিলাম ততই আমি শিহরিত হচ্ছিলাম। আসলে কি পরিমান জীবন বাজি রেখে তখনকার সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীনে অংশগ্রহণ করেছিল তা ডা. ইউসুফের মত কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছে বলেই হয়তো আমরা উনাদের মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছি। উনি ছিলেন বাঁশখালী কুতুবদিয়া থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত BLF কমান্ডার। উনার নেতৃত্বে সেই সময় আবু সোলাইমান চৌধুরী (সাবেক কেবিনেট সচিব), ছিদ্দিক, সরওয়ার, আহমেদ হোসেন (সাবেক প্রফেসর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) মান্নান, রশিদ মিয়া, দিদার, জাকারিয়া, মাজু, মততাজ (তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নৌবাহিনী অফিসার) অবশ্য উনি পরে শহীদ হয়েছিলেন, মোক্তার হোসেন, ছমিউদ্দিন (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান)সহ আর যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা কিভাবে সেইসময় ধাপে ধাপে বাঁশখালীর সরকারি স্থাপনাগুলোতে হামলা করে দখলে নেওয়ার পর পরবর্তীতে থানা হেডকোয়ার্টারে দক্ষতার সহিত হামলা পরিচালনা করে পাক হানাদারদের কবল থেকে বাঁশখালীকে উদ্ধার করেছিলেন তা উনার লিখনিতে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
আসলে ডা. সাহেবসহ মুক্তিযুদ্ধারা প্রায় প্রত্যেকেই যুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিটি মুহূর্তে জীবন মৃত্যুর শংকা নিয়ে যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছিলেন। কেননা এই যুদ্ধটা ছিল স্বাধীনতার জন্য মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে একটাই নিয়ম- Either you kill your enemy or you get killed. অর্থাৎ শত্রুকে হত্যা কর অথবা শাহদাত বরণ কর এই ব্রত নিয়েই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধারা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ডা. সাহেব দুইবার ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন। প্রথমবার শরনার্থী হয়ে হাজার হাজার মানুষের সাথে উনি সেখানে গিয়েছিলেন, তারপর সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। BLF গঠিত হওয়ার পর উনাকে বাঁশখালী কুতুবদিয়া থানার Chief in Command এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বার ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।
সুনসান নীরব চট্টগ্রাম শহর, রাস্তা ঘাট অনেকটাই ফাঁকা। সমস্যা নেই- দুজনের গায়ে পাঞ্জাবি পরনে ছেড়া লুংগি মাথায় টুপি, ছিদ্দিক সাহেব আবার ভাংগা ভাংগা উর্দুও বলতে পারেন।হেঁটে হেঁটে মাদারবাড়ি গিয়ে বাসে উঠলো মিরসরাই যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পর বাস লোকভর্তি হলে বাস ছেড়ে দে। সবার মধ্যে একধরনের অজানা শংকা কাজ করছিল, কখন কি হয়। এর মধ্যে বাসের হেলপার বলে উঠলো যাওয়ার পথে সীতাকুন্ডে বারআউলিয়ায় পাক চেকপোস্ট আছে। গতকাল ঐখানে চেক করতে গিয়ে পাকিরা দুজনের লাশ ফেলেছিল। তো সাবধান। ভয়ে সবার বুকে ধপধপ শুরু করলো। আতংকে ডা. সাহেবের শরীর যেন শীতল হয়ে আসছিল, কেননা উনার কোমরে গুজানো ছিল নাইন বোরের পিস্তল। ডাক্তার সাহেব মনে মনে ভাবতেছেন কেন যে অস্ত্রটা বাসায় রেখে আসলাম না। বাস বার আউলিয়া এসে থামলে যথানিয়মে চেকপোস্টে চেক শুরু হলো।
পাক আর্মির এক সদস্য এসে এক এক করে সব প্যাসেঞ্জারকে নীচে নামতে বলতে বললেন।বাহিরে গাড়ি থেকে একটু দূরে কয়েক জন পাক আর্মি সদস্য অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি থেকে নামিয়ে দাড়িওয়ালা পাঞ্জাবী পরিহিত লোকগুলোকে এক লাইনে দাঁড়ানোর জন্য পাক আর্মি নির্দেশ দিল। এর মধ্যে ডাক্তার সাহেবের সফর সঙ্গী ছিদ্দিক সাহেব একটু আধটু উর্দু বলে মুক্তিদের (মুক্তিযুদ্ধাদের) গালি দিতে দিতে বাস থেকে নামতে লাগলো, আর ডাক্তার সাহেব মনে মনে ধরেই নিল আর বুঝি বাঁচা গেলনা। তারপরও দোয়া দরুদ পড়ে যাচ্ছে কেননা কোমরে চেক করলেইতো শেষ। যাক নিচে নামার পরে তাদের ডান লাইনে দাঁড় করানো হলো। আর অন্যদেরকে বাম লাইনে দাঁড় করালো। ডান লাইনের লোকদের কে আবার গাড়িতে তুলে দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিতে বললো। এইভাবে সেইদিন কোনভাবে প্রাণে রক্ষা পেয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে ডাক্তার সাহেব মিরসরাই গিয়ে পৌঁছলো।তারপর সেখান থেকে আবার অনেকটুকু পথ পায়ে হেটে আবুতোরাব বাজারে গিয়ে কেফায়েত সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করলো। সেখানে কিছুদিন অপেক্ষা করার পর ডাক্তার সাহেবরা সেখান থেকে ইন্ডিয়া গেলেন উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। দ্বিতীয়বার ডা. আবু ইউসুফ সাহেব যেইভাবে একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলেন। দ্বিতীয়বার ইন্ডিয়া থেকে ফিরে ফটিকছড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করেই সেখানে যুইগ্যাছোলা বাজারের পাশে হানাদার বাহিনীর সাথে ডাক্তার সাহেবদের বাহিনীর দুই তিন ঘণ্টা সময় ধরে একটা তুমুল গোলাগুলি হয়। যুদ্ধ শেষে ডাক্তার সাহেবের দল যুইগ্যাছোলায় শেল্টারে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে গেলে, সেখানে যে এক বুড়িমা তাদেরকে কচুর ডোগা রান্না করে ভাত খাইয়েছিলেন, সেই স্মৃতির কথা ডাক্তার সাহেব এখনো বিভিন্ন জায়গায় বলিয়ে বেড়ান।
ফটিকছড়ির যুইগ্যাছোলার যুদ্ধ শেষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানার বিএলএফ ইউনিট প্রধানদের সাথে নিয়ে ডাক্তার সাহেব রাঙামাটির কাউখালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। কাউখালিতে এসে স্বপন কুমার চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে ডা. সাহেবর পুনর্মিলন হয়। একারণে পুনর্মিলন বলা হচ্ছে, কেননা কোন একসময় পুরো দলটি একসাথে ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। দুই/তিন ঘণ্টা পাহাড়ি সমতল পথ হাটার পর দলটি ফটিকছড়ির কোন একজায়গায় পাক আর্মির হামলার শিকার হয়ে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে ডাক্তার সাহেব তার সঙ্গীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন স্থান হয়ে কোন রকমে কাউখালিতে এসে পৌঁছালেন। বাকীরা কোথায় কিভাবে গেছেন তা উনার জানা ছিল না। তবে স্বপন কুমার, সুব্রত, নুরুন্নবী, দেওয়ানজী সহ হারানো বন্ধুদের জন্য উনার খুব মন খারাপ করলো। কেননা এরা আদৌও জীবিত আছে নাকি শাহদাতবরণ করেছেন তা ডা. সাহেবের জানা ছিল না। পরে কাউখালিতে এসে তাদের সাথে আবার সাক্ষাৎ হয়।হারানো সাথীদের ফিরে পাওয়াতে কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এর পরের গন্তব্য রাঙামাটি হয়ে বোয়ালখালী। ডাক্তার সাহেব এবং তার সাথীরা কাউখালিতে এসে জঙ্গলে পরিপূর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে তিনটা শেল্টারে অবস্থান করছিলেন গাইডের অপেক্ষায়।তবে একটা শেল্টার থেকে আরেকটা শেল্টার বেশ দূরত্বে অবস্থান করছিল। ডাক্তার সাহেবদের শেল্টারটা ছিল পাহাড়ের ঢালুতে অপেক্ষাকৃত সমতল জায়গায় দুই রুমের একটা ঘর, যেখানে একরুমে ডাক্তার সাহেব এবং স্বপন কুমার থাকতেন। পাশের রুমে থাকতেন সুব্রত দেওয়ানজী, নুরুন্নবী। তো কয়েকদিন সেখানে থাকার পর কোন গাইড আসেনা,তাই সবাই একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
একদিন রাতে শেল্টারে ডা. সাহেব বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা বই উল্টাচ্ছিলেন। বইটির নান ছিল ‘লবঙ বনে ঝড়’। এটি একটা পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত অনুবাদ গ্রন্থ। ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে ঐ দেশের বামপন্থী আন্দোলন যেই নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় দমন করা হয়েছিল, এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের সেই ঘটনা বর্ণনা সংবলিত বই। স্বপন কুমার ডাক্তার সাহেবের কাছ থেকে বইটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখলেন, তারপর কিছু একটা লিখে হাসিমুখে আবার ডাক্তার সাহেবকে বইটি এগিয়ে দিলেন। এরপর বললেন, বলুনতো ইউসুফ ভাই এই লেখাটি কোথায় দেখেছেন? বইটা হাতে নিয়ে দেখলেন স্বপন কুমার লিখেছেন
When you go home / Please tell of us
For their tomorrow / We have given our today.
লেখাটি পড়ে ডাক্তার সাহেব বলেন, স্বপনদা এই লেখাটি আমি কোথায় দেখেছি মনে পড়ছে না। তখন স্বপনদা বললেন, ইউসুপ ভাই- ফরাসি বিপ্লবে যারা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন, তাদের স্মৃতিসৌধে এই কথাগুলি লেখা আছে। এরপর স্বপনদা হেসে বললেন, ইউসুফ ভাই আমি যদি না ফিরি তাহলে আপনি ভবিষ্যৎ বংশধরদের বলবেন যে, তাদের আগামীর জন্য আমরা আমাদের বর্তমান কে বিসর্জন দিয়েছি।আর আপনি যদি না ফেরেন, তবে আমিই সেই কাজটি করবো।
ডাক্তার সাহেবেররা যখন এই কথাগুলো আলাপ করছিলেন, তখন পাশের অন্য শেল্টার থেকে তাদের রুমে ফজলুল করিম নামে এক ইখঋ সদস্য আসে। ঐদিন সকাল বেলা কাজ করতে গিয়ে ডাক্তার সাহেব কোমরে একটু ব্যাথা পেয়েছিলেন। তো ডাক্তার সাহেব ফজলুলকে বললেন, ফজলুল করিম তোমাদের শেল্টারে মেডিসিন বক্সে কিছু পেইনকিলার আছে। তুমি ভাই আমার জন্য মেডিসিন বক্সটা একটু নিয়ে আস।তখন ফজলুল বললেন, ইউসুফ ভাই আপনি আমাদের সাথে আজকে রাতে থাকেন, প্লিজ। প্রয়োজনে আমি আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাব শেল্টারে। সে পরক্ষণে স্বপন কুমারকে অনুরোধ করলো যে, স্বপনদা ইউসুফভাই কে বলুন, উনি যেন আজকে আমাদের সাথে থাকে। ফজলুল করিমের অনুরোধে স্বপন কুমার বললেন, ইউসুপ ভাই আজকে আপনি ওদের সাথে থাকুন। আমরাতো এখানে অনেকেই আছি। অবশেষে ফজলুলের কথায় রাজি হয়ে ডাক্তার সাহেব ওখানে চলে যান। ঐ রাতেই পাক আর্মি ডাক্তার সাহেবের ছেড়ে আসা শেল্টারে হামলা করলো। ফলে স্বপনদা, সুব্রত, দেওয়ানজী, নুরুন্নবী চারজনই সেই রাতে নিহত হয়। মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে স্বপনদার ডাক্তার সাহেবের বইয়ে লিখে দেওয়া কথাটি ডাক্তার সাহেবের চোখের সামনে এখনো জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠে।
When you go home / Please tell of us
For their tomorrow / We have given our today.
এইভাবেই সেইদিন ডাক্তার সাহেব একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলেন। মনেহয় যেন আমাদের জন্যই আল্লাহ উনাকে সেই দিন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক-
পশ্চিম বাঁশখালী উপক‚লীয় ডিগ্রি কলেজ