একক প্রার্থী নির্ধারণে বিএনপির প্রথম নজর চট্টগ্রাম বিভাগ

18

এম এ হোসাইন

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ছুটছেন বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ রবিবার ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগসহ আশপাশের জেলাগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকেছে বিএনপি। এই সভার মূল উদ্দেশ্য, একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা এবং মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করা।
বিএনপি এবার দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আনছে নতুন কৌশল। প্রচলিত পদ্ধতির মতো মনোনয়ন ফরম বিক্রি, যাচাই-বাছাই কিংবা জেলা পর্যায়ের প্রস্তাবের পরিবর্তে এবার দল নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, মাঠের জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক তৎপরতা মূল্যায়ন করে ‘গ্রিন সিগনাল’ দেবে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের। অর্থাৎ দলীয়ভাবে নির্বাচনে লড়ার অনুমতি বা সবুজ সংকেত পাবেন একক প্রার্থীই।
আজকের সভায় উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রামের ১৬টি আসন, কক্সবাজারের ৪টি, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩টি, নোয়াখালীর ৬টি, ল²ীপুরের ৪টি এবং ফেনীর ৩টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। মোট ৩৬ আসনের প্রায় ১২০ জন প্রার্থীকে ফোন করে ডাকা হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম থেকেই অন্তত ৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দলীয় সূত্র।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন এবং প্রার্থীদের দিকনির্দেশনা দেবেন। এই বৈঠকের পরই নির্দিষ্ট প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত করা হবে। যদিও সেই ঘোষণা আসতে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিভিন্ন প্রার্থীর অনুসারীরা এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও করছেন। দলিয়ভাবে সেটি স্বীকার না করলেও গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রিন সিগনাল দেয়ার বিষয়টি সামনে আনেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা এই মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেব। সেই প্রক্রিয়ায় আছি, আমরা শেষের দিকে। যাতে তারা মাঠে নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এবার জোট রাজনীতির বাস্তবতা বিবেচনায় কিছু আসন শরিক দলগুলোর জন্য খালি রাখবে। তবে বেশিরভাগ আসনেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। চলতি অক্টোবরের মধ্যেই এসব প্রার্থীদের গ্রিন সিগনাল দেওয়া হবে এবং নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করতে বলা হবে। এটি আসলে প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ। শেষ মুহূর্তের ঘোষণা আসবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৬টি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে ঢাকায় মতবিনিময় সভা হচ্ছে। একশরও বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা থাকবেন। তারেক রহমান ভার্চুয়ালি দিকনির্দেশনা দেবেন। এরপর সবাই মাঠে সংগঠিতভাবে কাজ শুরু করবেন।
তিনি বলেন, দু’একটি আসন জোটের সঙ্গে ভাগাভাগি হতে পারে, কিন্তু বাকি আসনগুলোতে আমরা একক প্রার্থী চূড়ান্তের দিকেই যাচ্ছি।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ আলোচনায় জানা গেছে, একাধিক আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ভিড় থাকলেও এবার সাংগঠনিক দক্ষতা, নির্বাচনযোগ্যতা ও মাঠের গ্রহণযোগ্যতাই হবে চূড়ান্ত বিবেচ্য বিষয়। পাশাপাশি জোট রাজনীতির বাস্তবতায় কয়েকটি আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটি আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। সবাই যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী। কোনো আসনে দুই-তিনজন আবার কোন আসনে চার-পাঁচজন পর্যন্ত প্রার্থী। তাই আগেই সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এ সভা। যাতে প্রার্থী ঘোষণা হলে কোনো বিভক্তি না ঘটে।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। সবাই তা মেনে মাঠে কাজ করবেন। ওনার কথা সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন।
দলীয় সূত্র বলছে, অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রায় ২০০ আসনে বিএনপি তাদের একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দেবে। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, এই বৈঠক চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন গতি আনবে। এতদিন যাঁরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন, তাঁরা এখন সরাসরি মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রার্থী চূড়ান্ত হলে আগামী মাস থেকেই বিভাগজুড়ে শুরু হবে নির্বাচনী প্রচারণা।