একই স্থানে বারবার দুর্ঘটনা নেই সতর্কতা সাইনবোর্ডও

1

এম. সাইফুল্লাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায়। এটি সড়ক দুর্ঘটনার হটস্পট হিসেবে পরিচিত। ওই স্থানে সড়কের দুই পাশে ঘন বনাঞ্চল, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, বেপরোয়া গতির যান চলাচল, লবণ পানিতে পিচ্ছিল সড়ক ও ঢালু হওয়ার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার হটস্পট হলেও ওই স্থানের কোথায় স্থাপন করা হয়নি সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড।
সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত ১৩ মার্চ বাসের সাথে কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ ৩ জন গুরুতর আহত হন। তার আগে গত ৩ মার্চ পৃথক ৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেছে আলু বোঝাই একটি ট্রাক, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাসের সাথে কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেছে লবণ বোঝাই ট্রাক। গত ২৫ ফেব্রæয়ারি ওভারটেক করতে গিয়ে প্রাইভেটকারের পেছনে বাসের ধাক্কা ও একই বাসের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ১৯ ফেব্রæয়ারি একইস্থানে পর পর তিনটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ছিল মাইক্রোবাসের সাথে ম্যাজিক গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ, আরেকটি মাইক্রোবাস যাত্রীবাহী বাসের পেছনে ধাক্কা ও এবং অপরটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ। গত ৩১ জানুয়ারি ট্রাকের সাথে যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এই স্থানেই। গত ৬ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে বিলে পড়ে উল্টে যায় একটি কাভার্ডভ্যান। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন।
এই একই স্থানে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রশস্ত সড়ক, বিপদজনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, লবণ পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল, গাড়ির এলইডি হেডলাইটের আলো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল ও সড়কের দু’পাশে অসমান অংশসহ কয়েকটি কারণে এই স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। বিশেষ করে মধ্যরাত ও ভোরের দিকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসেন পর্যটকরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকাটি প্রায় এক কিলোমিটার বিস্তৃত। সড়কের উভয় পাশে অসংখ্য স্থানে দেখা গেছে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ভাঙা গøাসের টুকরো। জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়কের দুই স্থানে ঢালুর অংশে রয়েছে বিপদজ্জনক বাঁক। সড়কের দুই পাশেই রয়েছে বনাঞ্চল। যার ফলে সড়কের ওই স্থানে সূর্যের আলো খুবই কম পড়ে। তাছাড়া লবণবাহী ট্রাক থেকে সড়কে পড়া পানি কারণে ওই স্থানে সড়ক সবসময় পিচ্ছিল থাকে। বিশেষ করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এছাড়া দুর্ঘটনাপ্রবণ জাঙ্গালিয়া এলাকায় দেখা যায়নি কোনো সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড।
স্থানীয় সোহাগ মিয়া জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে মহাসড়কের জাঙ্গালিয়া এলাকা দুর্ঘটনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে লবণ পানিতে মহাসড়কে পড়ে ঢালু স্থান পিচ্ছিল হয়ে যায়। যার ফলে প্রায়সময় ওই স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত ওই স্থানে নেই কোনো সচেতনতা কিংবা সতর্কতার সাইন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে দুর্ঘটনার হার কমাতে নেয়নি কোনো উদ্যোগ। আমরা জাঙ্গালিয়া এলাকায় দুর্ঘটনার মাত্রা কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন কারণের মধ্যে মহাসড়ক চারলেন বা ছয়লেনে এখনো উন্নীত না হওয়া, বিপদজনক অসংখ্য বাঁক, লবণের পানির কারনে সড়কের পিচ্ছিলতা, মূল সড়কের সাথে দু’পাশের দূরত্ব বৃদ্ধি, বেপরোয়া গতি ও চালকের অদক্ষতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত সেমিনার, র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ করে আসছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া সড়কের বিপদজনক স্থানগুলোতে জনসচেতনতামূলক বিলবোর্ড লাগানোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, অপ্রশস্ত মহাসড়ক, বিপদজনক বাঁক, বাঁকের আগে-পরে গতিরোধক না থাকা, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, বেপরোয়া গতি, লবণ পানিতে সড়কে পিচ্ছিলতা, রোড সাইন না থাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চালকদের এই সড়ক সম্পর্কে ধারণা না থাকা ইত্যাদি কারণে জাঙ্গালিয়া এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। হাইওয়ে থানার উদ্যোগে প্রতি মাসে চালক ও সহকারিদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন চলমান আছে। এছাড়া দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন সময় চালকদের মাঝে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।