এই অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে সার্ক : ড. ইউনূস

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

সার্কের মহাসচিব গোলাম সারওয়ার ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৃথক এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে সার্ককে গতিশীল ও কার্যকর করা এবং বাংলাদেশে সুইডিশ বিনিয়োগ, বাংলাদেশের গণবিপ্লব ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নারীদের ভ‚মিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
সার্কের মহাসচিব সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থে আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে গতিশীল ও কার্যকর করতে সংস্থার সচিবালয়কে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। সার্ক একটি বিস্মৃত শব্দ। এটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারলে এটি পুরো অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে।
সার্কের মহাসচিব গোলাম সারওয়ার সার্কের বড় সমর্থক হওয়ার জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বহুপক্ষীয় সংস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের কাছে তার সা¤প্রতিক আহŸানে তারা উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে কর্ম পর্যায়ে সার্কের চলমান কার্যক্রমের বিষয়ে অবহিত করেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রোগ্রামিং কমিটি, আঞ্চলিক কেন্দ্রের গভর্নিং বডি এবং বিশেষায়িত সংস্থা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা, এসডিজি, আঞ্চলিক একীকরণ, শুল্ক সহযোগিতা ইত্যাদি। তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের অভাবে কার্যকরী উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত শক্তি ও স্পষ্টতা পাচ্ছে না।
অধ্যাপক ইউনূস ও সার্ক মহাসচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্যান্য খাতের মন্ত্রীদের বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা এবং সংস্থার আরও ভাল কার্যকারিতার জন্য নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
মহাসচিব সারওয়ার বলেন, ‘আমাদের অনেক সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা সেগুলো অন্বেষণ করার চেষ্টা করছি’।
অধ্যাপক ইউনূস মহাসচিব সারওয়ারকে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে নেপালের জলবিদ্যুৎ রপ্তানির মতো বহুপক্ষীয় বিষয়ে কাজ করার আহŸান জানা।
অধ্যাপক ইউনূস জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যুব উৎসবে যোগ দিতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর তরুণদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘এটি ভালো হবে কারণ এটি তরুণদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সার্কের পুরো ধারণাটি হল মানুষকে একত্রিত করা। এটি দ্বার উন্মোচনের একটি উপায় হতে পারে।
এ বছর সার্ক ঐতিহাসিক ৪০তম সনদ দিবস উদ্যাপন করছে। সার্ক মহাসচিব সংস্থার চার্টার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সার্ক প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জনে করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে অব্যাহত সহায়তা ও নির্দেশনা কামনা করেন।
অন্যদিকে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস-কে সাক্ষাৎ প্রদানকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই বিপ্লবের মূল কথা ছিল সংস্কার। তার সরকার নির্বাচনের আগে সেই সংস্কার করতে বদ্ধপরিকর।
রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, সুইডিশ সরকার ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করে এবং পুলিশ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং বেসামরিক প্রশাসনের সংস্কারের পদক্ষেপকে সমর্থন করে।
রাষ্ট্রদূত ইউনূসকে বলেন, আপনি যে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বৈঠকে তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের নানাদিক, বাংলাদেশে সুইডিশ বিনিয়োগ এবং গণঅভ্যুত্থানে নারীর ভ‚মিকা নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও সুইডিশ বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ব্যবসা করার সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করছে। এ সময় সুইডেন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহŸান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে, যদিও সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে উচ্চ প্রত্যাশাসহ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। প্রত্যাশা পূরণ করা একটি বড় কাজ। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু আমরা খুব সতর্ক আছি।
২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী বলেন, তার সরকার দুর্নীতি দমন করেছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগ সহজ করেছে এবং শ্রম আইনের বিষয়ে আইএলও কনভেনশন অনুমোদনের জন্য অগ্রসর হয়েছে।
বৈঠকে এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব ও মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহনাজ গাজী উপস্থিত ছিলেন।