এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যত বদলে দেবে ডিপসিক!

1

বর্তমান সময়ে দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ এআই খেলোয়াড় হিসেবে উদয় ঘটেছে ডিপসিক-এর। এর উদ্ভাবনী পদ্ধতি ও যুগান্তকারী অগ্রগতির মাধ্যমে এরইমধ্যে সবার মনোযোগ কেড়েছে এটি। ডিপসিক এআইয়ের যাত্রা, অর্জন ও এর সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। খবর বিডিনিউজের।
এআইকে আরও স্মার্ট, দ্রুত ও অভিযোজনযোগ্য করার মিশন নিয়ে শুরু হয়েছিল ডিপসিক এআইয়ের যাত্রা। এআই প্রযুক্তি কীভাবে তথ্য শেখে ও তা প্রক্রিয়া করে সে বিষয়টি উন্নত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন এর নির্মাতারা, যা আরও দক্ষ এআই সিস্টেম তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এর মূলে রয়েছে, ডিপ লার্নিংয়ে বিশেষজ্ঞ স্টার্টআপটি। এআইয়ের একটি শাখা হচ্ছে ডিপ লার্নিং, যা এআইয়ের বিভিন্ন মেশিনকে প্যাটার্ন চিনতে ও মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে তা অনুকরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে প্রশিক্ষণ দেয়। যারা কখনও ‘ফেস রিকগনিশন’ অ্যাপের ব্যবহার বা কোনও ভাষা অনুবাদ টুলের উপর নির্ভর করেছেন তারা এরইমধ্যে ডিপ লার্নিংয়ের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানেন।
ডিপসিক এআইয়ের অন্যন্য বিষয় হচ্ছে, এআই বিকাশের কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলার সক্ষমতা। তেমনি একটি চ্যালেঞ্জ হলো ডেটা। বিভিন্ন এআই মডেলকে কার্যকরভাবে শেখানোর জন্য উচ্চমানের অনেক ডেটা প্রয়োজন। তবে এসব ডেটা সংগ্রহ ও পরিচালনার বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
উচ্চমানের নির্ভুলতা বজায় রেখে বিভিন্ন ছোট আকারের ডেটাসেটের সঙ্গে কাজ করার জন্য নানা টুল তৈরি করেছে স্টার্টআপটি। যার মানে, তাদের বিভিন্ন এআই মডেল দ্রুত ও কম সংস্থান নিয়েও শিখতে পারে। আর এ বিষয়টিই আরও ব্যবসা ও শিল্পের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে স্টার্টআপটিকে।
প্রচলিত বিভিন্ন এআই সিস্টেমে অনেক পরিমাণে কম্পিউটিং শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে উচ্চ শক্তি খরচের পাশাপাশি এর পরিবেশের ওপরও পড়ে। এই শক্তির ব্যবহার কমাতে অগ্রণী কৌশল আবিষ্কার করেছে ডিপসিক এআই, যা দৈনন্দিন জীবনে এআইকে আরও সংহত করার সঙ্গে সঙ্গে এর এক এক গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করছে।
বিভিন্ন একাডেমিক কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতায় করা গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শ এআই সিস্টেমের তুলনায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম শক্তি ব্যবহার করে স্টার্টআপটির বিভিন্ন মডেল। একই রকম বা এর চেয়ে বেশি কর্মক্ষমতাও দেয়।
ডিপসিক এআইয়ের অগ্রগতির পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে, এর অভিযোজনযোগ্যতা। ডিপসিক এআই এমন মডেল তৈরি করেছে, যা দ্রæত নতুন ডেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ফলে এ বৈশিষ্ট্যটি অন্যান্য এআই মডেল থেকে ডিপসিককে আরও নির্ভরযোগ্য ও বহুমুখী করে তুলেছে।
এআই বিকাশে নৈতিকতা ও স্বচ্ছতাকেও অগ্রাধিকার দিয়েছে স্টার্টআপটি। এআই যত শক্তিশালী হচ্ছে ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে উদ্বেগও ততই বেড়েছে। নিজেদের বিভিন্ন এআই অ্যালগরিদমকে সকলের বোধগম্য ও ন্যায্য করার নানা উপায় নিয়ে সক্রিয়ভাবে গবেষণা করছে ডিপসিক, যাতে এরা অনিচ্ছাকৃতভাবে বৈষম্য বা ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় তা-ও নিশ্চিত করেছে স্টার্টআপটি।
ডিপসিক এআইয়ের এমন অগ্রগতি থেকে ইঙ্গিতে মেলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যত কেবল আরও স্মার্ট মেশিন তৈরি সম্পর্কে নয়, বরং প্রযুক্তিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, শক্তিসাশ্রয়ী ও মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সমন্বয় করে তোলার বিষয়েও।