নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
চট্টগ্রামের জন্য এমন সুখের দিন আর কখনও আসেনি। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ক্ষুদ্র ঋণের গ্রামীণ মডেলের উদ্্গাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম নড়েচড়ে বসেছিল। কারণ প্রধান উপদেষ্টার পদমর্যাদা প্রধানমন্ত্রীর সমান। চাঁদপুরের মিজানুর রহমান চৌধুরীর আগে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকেও কখনও কেউ, তিনি রাজনীতিবিদ বা টেকনোক্রেট যাই হোন না কেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হননি। ড. ইউনূসই চট্টগ্রাম জেলা থেকে প্রথম এবং চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হলেন। হোন তিনি প্রধান উপদেষ্টা, যেহেতু মর্যাদাটা প্রধানমন্ত্রীর, তাই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বললে অসুবিধাটা কোথায়?
ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের প্রথম নোবেল বিজয়ী বললাম এ কারণে যে, আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী কোনো বাঙালি তাঁর পূর্বে নোবেল পুরস্কার লাভ করেননি। নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি হলেও তাঁরা বাংলাদেশি নন।
চট্টগ্রাম শুধু ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা পায়নি, আরও চারজন চট্টগ্রামবাসীকে উপদেষ্টা হিসেবে পেয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন হাটহাজারীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, চন্দনাইশ নিবাসী লেখক ও গবেষক ফরিদা আখতার, হাটহাজারী নিবাসী গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম ও সাতকানিয়া নিবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর আ ফ ম খালিদ হাসান।
মন্ত্রিপরিষদে (উপদেষ্টা পরিষদ) চট্টগ্রামের পাঁচজন কৃতী সন্তানের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামের জন্য বিরাট গৌরবের বিষয়। তাঁরা উপদেষ্টা পরিষদে থেকে নিশ্চয়ই চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ কিছু কাজ করবেন। যেমন : চট্টগ্রামের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ চট্টগ্রাম বন্দরটা মাদার ভেসেল আসতে না পারার কারণে লাইটারেজ বন্দরের মত হয়ে গেছে। একটা বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্প কখন বাস্তবায়িত হবে তা কেউ বলতে পারেনা। এই বিষয়টা হয়ত: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার গোচরীভ‚ত করতে পারেন তাঁর উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে ঢাকা যেতে হলে টঙ্গী-ভৈরব অনেক দূর ঘুরে যেতে হয়। যে কারণে ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে ৫/৬ ঘন্টা লেগে যায়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের লাকসাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত একটা কর্ড লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা বহু বছর ধরে ঝুলে আছে। সেই প্রকল্পে যদি হাত দেওয়া যায়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব অন্তত ২/৩ ঘন্টা কমে যাবে।
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর একটি রেল সেতু নির্মাণ করা হয়। সেই সেতুর মেয়াদ বহু আগে শেষ হয়ে গেছে। সেতুটি এখন জরাজীর্ণ হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ফলে শহরের সাথে বোয়ালখালীর মানুষের যোগাযোগ কঠিন হয়ে গেছে। এখন ফেরি সার্ভিস দিয়ে যোগাযোগ টিকিয়ে রাখা হয়েছে, কিন্তু তাতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বৈ কমেনি। এ পরিস্থিতিতে কালুরঘাটের দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলীর উপর আরেকটি সেতু নির্মাণের জন্য বহুদিন ধরে স্থানীয় জনসাধারণ দাবি জানিয়ে আসছে। জনপ্রতিনিধিরাও তাদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরে কালুরঘাটে তৃতীয় সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু হবে হবে করেও সেই সেতু হয়নি। ইতিমধ্যে বোয়ালখালীর জনসাধারণ জনসভা, পথসভা, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, ঘেরাও ইত্যাদি অনেক কর্মসূচি পালন করেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের জনসাধারণের এই প্রাণের দাবিটি পূরণ করার জন্য তাঁর কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন, চট্টগ্রামবাসী যদি তেমন আশা পোষণ করেন, তাহলে সেটা কী বেশি হয়ে যাবে?
এসব সমস্যা নিয়ে আমি আগেও লিখেছি। কিন্তু আজ যে কথাটা বিশেষ করে বলতে চাই সেটা হচ্ছে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সাহেব চট্টগ্রামে একটি কীর্তি স্থাপন করেছেন। সেটি হচ্ছে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে বাঙালির বিজয়ের মাসে একটি মেলা আরম্ভ হয়েছিল। সেই মেলা আয়োজনের পিছনে অনেকের উদ্যোগ-আয়োজন সক্রিয় থাকলেও মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। মহিউদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সাংবাদিক আখতার-উন-নবী, আজিজুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া ও আবুল মোমেন, মানবাধিকার সংগঠক বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, শওকত হাফিজ খান রুশ্নি, জাফর আহমদ, কাজী শাহজাহান, ডা. মাহফুজুর রহমান, খালেকুজ্জামান, আবুল হাশেম, সীতাকুÐের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, খালেদুজ্জামান দাদুল, অনিল বরণ রায়, সৈয়দ আবুল বশর এবং কাজীর দেউড়ি আসকার দীঘি এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আলী আবদুল্লাহ, সানোয়ার, ফ্রেন্ডস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আহমদ, বাচ্চু, শ্যামা প্রসাদ চৌধুরী, রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ব্যাটারি গলির সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, রফিক, শাহ আলমসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের সমবেত প্রচেষ্টায় বিজয় মেলা আয়োজন সম্ভব হয়েছিল। ফারুক-ই-আজম পূর্বকোণে গিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলার পর আমিও বিজয় মেলার কর্মকাÐে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম। অবশ্য তিনি চেয়েছিলেন বাঙালির বিজয়ের মাসে বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ মেলার আকারে বৃহৎ পরিসরে কোন একটা কর্মযজ্ঞ সংগঠিত করা। বিশেষ করে দেশিয় কাপড়-চোপড়, পুতুল ইত্যাদির প্রদর্শন ও বিকিকিনির ব্যবস্থা করা। মেহেদীবাগে ‘রমণীয়া’ নামে তার একটি বুটিকের দোকান আছে। সেই দোকানে তিনি ঈদ, পূজা-পার্বণ উপলক্ষে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাকের ডিজাইন করে প্রদর্শন করতেন। তখন ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ প্রতি বছর ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করত, রমণীয়া প্রায় প্রতি বছরই সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম, দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করত। আরেকটা কথা বলা দরকার, জিয়াউর রহমানের সময়ে মাহফুজুর রহমান নামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একজন কমান্ডার আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন বামঘেঁষা নঈম জাহাঙ্গীর প্রমুখ সংসদ নিয়ে তৎপর ছিলেন এবং তারা বিচিত্রার সঙ্গেও কোনভাবে যুক্ত ছিলেন। বিচিত্রার সাংবাদিকদের মধ্যেও অনেকে বামপন্থার অনুসারী ছিলেন। বিশেষ করে সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী তো সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন। ১১ দফার অন্যতম সিগনেটরী মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত মাহফুজ উল্লাহ ৬০ এর দশকে ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রæপ) বিশিষ্ট নেতা ছিলেন।
যাই হোক, সেই সময় ফারুক-ই-আজম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার সঙ্গে ন্যাভাল কমান্ডো অনিল বরণ রায় এবং আবুল বশর প্রমুখ ছিলেন।
মোদ্দা কথা হচ্ছে ফারুক-ই-আজম সৃজনশীল মানুষ এবং বিজয় মেলা আয়োজন তাঁর সৃষ্টিশীলতারই সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর উদ্দেশ্য যাই থাক, বিজয় মেলা বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছিল।
কিন্তু বিজয় মেলা শেষ পর্যন্ত ফারুক-ই-আজমের নিয়ন্ত্রণে ছিল না এবং শেষদিকে বিজয় মেলা বাণিজ্য বুদ্ধির ধারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হতে থাকলে তা অনেকটা লক্ষচ্যুত হয়। এই বিরাট মেলাটি কিছু ভাগ্যান্বেষী মানুষের ভাগ্য বদলের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল এমন জল্পনা-কল্পনা হতে আমি শুনেছি। ফারুক-ই-আজম যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিজয় মেলার উদ্ভাবন করেছেন, সেই মেলা আবার স্বরূপে ফিরিয়ে আনার তাঁর কাছে একটি সুবর্ণ সুযোগ সমুপস্থিত হয়েছে। আর দু’মাস পরেই মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আমাদের জীবনে উপস্থিত হবে। আমি মাননীয় উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম মহোদয়ের কাছে তাঁর বিজয় মেলা পুুনরুদ্ধার ও স্বরূপে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আহŸান জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহরের বিএলএফ কমান্ডার ডা. মাহফুজুর রহমান এখনো সুস্থ শরীরে বেঁচে আছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের উত্তর প্রদেশের তান্দুয়ায় বিএলএফ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ফাহিম উদ্দিন, যুদ্ধকালীন আরো দুজন কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ-আল-হারুন ও বাংলাদেশ বিমানের সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা শাহজাহান খান, হাটহাজারী থানার যুদ্ধকালীন বিএলএফ কমান্ডার এস এম ফজলুল হক, সি-ইএন-সি স্পেশাল জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ফটিকছড়ি থানার যুদ্ধকালীন বিএলএফ কমান্ডার আনোয়ারুল আজিম, বাঁশখালী থানার বিএলএফ কমান্ডার ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী, আনোয়ারা থানার বিএলএফ কমান্ডার সলিমুল হক চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার বিএলএফ কমান্ডার রাজেন্দ্র প্রসাদ চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার যুদ্ধকালীন এফএফ কমান্ডার আ হ ম নাসির উদ্দিন, জাপানের অনারারি কনসাল নুরুল ইসলাম, এস এম মাহবুবুল আলম, সি-ইএন-সি স্পেশাল ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু, যুদ্ধকালীন কমান্ডার সৈয়দ এমরান, শহরের যুদ্ধকালীন সুইসাইড স্কোয়াডের কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আনিস কাদেরী, মৌলভী সৈয়দের সহযোদ্ধা আবু সাঈদ সর্দার, রাঙ্গুনিয়ার প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতী, চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সরওয়ার কামাল, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ- এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা এখনও কর্মক্ষম আছেন। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহরের এফএফ ও বিএলএফের যৌথ বাহিনীর কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ এবং সবার মুরুব্বি মোহাম্মদ হারিছও আমাদের মাঝে আছেন। এঁদের মধ্যে তিনি কাকে নেবেন, বা আদৌ নেওয়ার প্রয়োজন তিনি মনে করেন কিনা, সে ব্যাপারে ফারুক ভাই যথেষ্ট বুদ্ধি, বিবেচনা রাখেন। তিনি সবাইকে চেনেন এবং জানেন। চট্টগ্রাম তাঁর বহু দিনের কর্মক্ষেত্র। তবে তাঁকে বিজয় মেলা নিয়ে সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিজয় মেলা ছাড়া আরো একটি বিষয়ের প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেটিও মেলা- তার নাম একুশ মেলা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী ফেব্রæয়ারি মাসে একটি বইমেলা শুরু হয়েছিলো চট্টগ্রামে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও মুসলিম হল মাঠে মেলাটি আরম্ভ করেছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, শিল্পী অরুণ চন্দ্র বণিক। তাঁর বাড়ি চান্দগাঁও থানার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পাড়ায়। কলকাতার রুমা গুহঠাকুরতার কলকাতা ইয়থ কয়ার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি চট্টগ্রামে ‘চট্টল ইয়থ কয়ার’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তাঁর প্রতিবেশি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেপাল ধরের বক্সিরহাট গলির মুখে বিচিত্রা বিপণি নামে একটি স্বর্ণের দোকানসহ বিল্ডিং ছিলো। নেপাল ধরের ছেলে সেই সময়ের চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ ছাত্রনেতা সন্তোষ ধর ছিলেন অরুণ বণিকের বন্ধু, সহপাঠী। সেই সূত্রে তিনি নেপার বাবুর বিল্ডিং-এর দোতলায় চট্টল ইয়থ কয়ারের অফিস ও রিহার্সালের কাজে ব্যবহারের জন্য একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন। এই চট্টল ইয়থ কয়ারই একুশ মেলার প্রসূতি। কোন মেলাই একজনে করতে পারে না, একুশ মেলাও অরুণ বণিক একা করেননি। ছাত্রনেতা ও বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান নীট অ্যাডভার্টাইজিং-এর স্বত্বাধিকারী জহীর কাজী, মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী যদু গোপাল বৈষ্ণব, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতী, ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান (বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) , শিল্পী সুজিত ভট্টাচার্য দোলন, শিল্পী এম এ হাশেম, সঙ্গীত শিল্পী ও শিক্ষক সম্প্রতি প্রয়াত সুভাষ দাশগুপ্ত, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সুভাষ দত্ত, ব্যাংকার জাকের হোসেন চৌধুরী, আজিজ উদ্দিন আহমদ, সন্তোষ ধর, কুমার কিশোর রায় চৌধুরী, বিপুল কিশোর রায় চৌধুরী, উস্তাদ পরেশ চন্দ্র কুরী ও দিলীপ দাশ, সাহিত্যসেবী প্রদীপ বড়–য়া, বিশিষ্ট সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার স্বপন বড়–য়া, মমতাজ উদ্দিন আহমদ, দিলীপ ভদ্র, মীনাক্ষী নন্দী, নজরুল ইসলাম মোস্তাফিজ, অনুপ বিশ্বাস, শাহীন আকতার, বিজয়া সিনহা জয়া, নন্দিতা দাশগুপ্ত, মিতা চৌধুরী, চিত্রা গুহ, মুক্তা দেবী, শম্পা ভট্টাচার্য, এডভোকেট সরযু ভট্টাচার্য, সমরজিত রায়, রূপক কান্তি নাথ, শওকত আলী সেলিম, সুজিত দাশ অপু, সুজিত চৌধুরী মিন্টু, কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, আবৃত্তিশিল্পী দিলরুবা ছুটি, পঙ্কজ সেনগুপ্ত, উদয়ন সিকদার, স্বপন দেব, আল আমীন জাবের ছাবেরী, অমর বরণ দেওয়ানজী, মতি লাল দেওয়ানজী, প্রণবরাজ বড়–য়া, আবু আলম হানিফ, মোহাম্মদ হানিফ, ছবির আহমদ, মোহাম্মদ শহীদ-এমনি আরো অজানা সাহিত্যসেবী, সংগঠক শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠকের সমন্বয়ে অরুণ চন্দ্র বণিক চট্টগ্রামের একদা বৃহৎ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত, কাজী জাফরুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইউসুফ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য এবং এই নিবন্ধের লেখক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী একুশ মেলার ব্যানারে চট্টগ্রামে একটি বইমেলা গড়ে উঠতে দেখে উৎসাহিত হয়ে উঠেছিলেন এবং তারা এই মেলাটাকে বিকশিত করতে নানাভাবে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও ছত্রচ্ছায়া দিয়েছিলেন।
বিজয় মেলা যেমন ফারুক-ই-আজমের হাতছাড়া হয়ে যায়, তেমনি একুশ মেলাও বেহাত হয়ে যায়। একুশ মেলা এখন সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় প্রতি বছর আয়োজন করলেও ১৯৯০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একুশ মেলার যে আমেজ, আবেদন ও প্রাণের স্পর্শ ফুটে উঠত, সেটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশেষত: ঢাকা থেকে আগে যেভাবে রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, কবি, শিল্পী, আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের উপস্থিতি দিয়ে একুশ মেলাকে আলোকিত করতেন, তাঁরা এখন আর আসেন না এবং একুশ মেলার অন্ধকারও দূরীভ‚ত হয় না। লেখক :
বিজয় মেলা, একুশ মেলা চট্টগ্রামের গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা জনাব ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক তাঁদের আশু কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সাংবাদিক