নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঁশখালী-আনোয়ারা উপকূল রক্ষায় অনুমোদিত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী (নেভী)। যে কারণে ৮৭৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকার এ প্রকল্পের চলমান টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে নেবে নেভী। ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি গত ২৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খ.ম জুলফিকার তারেককে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক জুলফিকার তারেক পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনী অফার করেছে, হয়তো উনাদেরকে প্রকল্পটি দেয়া হবে। আমরা আপাতত টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছি। তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত দেয় নেভী বাঁশখালী-আনোয়ারা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’
পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্পের অধীনে ৮৮ দশমিক ৭০ হেক্টর বনায়ন, ১১ দশমিক ৫৮৫ কিলোমিটার সমুদ্র তীরবর্তী বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ কাজ, এক দশমিক ১০০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ হবে। এর মধ্যে বাঁশখালীর বাহারচড়া এক হাজার মিটার, খানখানাবাদে এক হাজার ৩১০ মিটার, ছনুয়ায় দুই হাজার ৮০০ মিটার, সাধনপুরে এক হাজার ১০০ মিটার, মোহনায় পুরাতন বাঁধ শক্তিশালীকরণ এক হাজার ৩০০ মিটার সমুদ্র তীর প্রতিরক্ষা ও সাঙ্গু নদী তীর রক্ষা কাজ হবে। আনোয়ারা অংশের রায়পুরে দুই হাজার ৭৭৫ মিটার, রায়পুরে এক হাজার ২০০ মিটার, জুইদন্ডী এক হাজার ২০০ মিটার সমুদ্র তীর প্রতিরক্ষা ও উপকূলীয় বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ কাজ হবে। বাঁশখালীতে ৫৮৮ কোটি ৮৩ লক্ষ ও আনোয়ারায় ৩১৯ কোটি দুই লক্ষ টাকায় ৩৪টি প্যাকেজে কাজ হবে। গত ১৫ জুলাই প্রকল্পের জিও জারি হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ দরপত্র আহবান করা হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে বাঁশখালী-আনোয়ারা বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নৌবাহিনী বাস্তবায়ন করলে টেকসই ও মজবুত হবে বলেই মনে করছেন উপকূলবাসী। খানখানাবাদের রায়ছটা এলাকার বাসিন্দা মো. জাহেদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাঁশখালীতে অতীতে বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ে হরিলুট হয়েছে। কদমরসুল, প্রেমাশিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ৩০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষের এক বছরের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো প্রকল্প আওয়ামী লীগের সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও পানি বোর্ডের লোকজন লুটপাট করেছে। এখন নতুন অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ নৌবাহিনী করছে শুনে ভালো লাগছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিবর্তে নৌবাহিনী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে কাজ অনেক বেশি টেকসই ও মজবুত হবে।’
বাঁশখালীর বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মানের কাজ নৌবাহিনী করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। একইসাথে গত ১৬ বছরে বাঁশখালীতে কি পরিমাণ বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে, সেখানে কোন দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা তদন্ত করা প্রয়োজন। আমার জানামতে, দুদক তদন্ত করলেই লুটপাটের চিত্র উঠে আসবে।’
আনোয়ারার রায়পুর এলাকার বাসিন্দা শামসুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘উপকূল রক্ষায় নৌবাহিনী বাঁধ নির্মাণ করলে কাজের গুনগত মান ভালো থাকবে। একই সাথে দুর্নীতিও কমবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটি নৌবাহিনী বাস্তবায়ন করতে পারে এমন খবরে উপকূলবাসী খুশী হলেও হতাশ হয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-২) তানজীর সাইফ আহমদ অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্য কোন বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূলীয় উপজেলা হওয়ায় প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও উক্ত জোয়ারের প্রভাবে প্রকল্প এলাকার বাঁধসমূহ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাঙ্গু নদীর উভয় তীরের ভাঙনের কারণে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় বসতবাড়ি ও আবাদি জমি ক্রমাগত নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙ্গনের কবল থেকে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপকূল রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিল। এর আগে বাঁশখালী উপকূলে ২৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও তা নির্মাণ শেষের এক বছরের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনোয়ারাতেও দুটি প্রকল্পে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেড়িবাঁধের উন্নয়ন হয়েছে।