নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে ঘুরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন যাত্রায় আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে। ইঞ্জিন কোচ মেরামতের পাশাপাশি রেলপথ ও লেভেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী স্পেশাল ও বাড়তি ট্রেন চালাতে শতাধিক ইঞ্জিন পুরোপুরি প্রস্তুত রাখবে রেল। একইসাথে ৯০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। আগামী ঈদের আগেই এসব ইঞ্জিন কোচ রেল বহরে যুক্ত করা হবে। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে অগ্রিম ও শেষ সপ্তাহ থেকে ফিরতি ট্রেন টিকিট বিক্রি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাত্রীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সেজন্য কিছু পরিকল্পনাও থাকবে। তবে ইঞ্জিন ও কোচ নিয়ে যাতে কোন বিপত্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য আগেভাগে ইঞ্জিন ও কোচ মেরামত চলছে। রেললাইন ও লেভেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তাও জোরদার করা হবে। আশা করি প্রতিবারের ন্যায় এবারও যাত্রীরা সুন্দর সেবা পাওয়ার মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রা করবে।’
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, রেলের বড় দুশ্চিন্তার কারণ শিডিউল বিপর্যয়। ঈদযাত্রায় কোনরূপ শিডিউল বিপর্যয় যাতে না ঘটে সেজন্য ইঞ্জিন ও কোচ সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই সংকট স্বাভাবিক না হলে ঈদযাত্রায় বিপত্তি ঘটবে। তবে আগেভাগে ইঞ্জিন ও কোচ মেরামত শুরু করায় আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দৈনিক ১১৫টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে পূর্বাঞ্চলে। কিন্তু নিয়মিত ইঞ্জিন চালু থাকে ৯০-৯৫টি। এর মধ্যে ৬৫টি যাত্রীবাহী এবং ১৬টি ইঞ্জিন পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। কোন কারণে ইঞ্জিন সংকট থাকলেই শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। আপাতত কোচ সংকট নেই। এরপরেও ঈদে ট্রেন সার্ভিস বাড়াতে অতিরিক্ত কোচের প্রয়োজন হবে। যে কারণে পাহাড়তলী ও সৈয়দপুর কারখানায় ৯০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই এসব বগি রেল বহরে যুক্ত হবে।
পাহাড়তলী কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ আমীর উদ্দীন বলেন, ‘ঈদে যাত্রী চাহিদা বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি ট্রেন চালাতে হয়। সেসময় অধিকাংশ ট্রেনেই তিন থেকে চারটি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করতে হয়। আবার ঈদ স্পেশাল ট্রেনের জন্যও কোচ প্রস্তুত রাখতে হয়। সবমিলিয়ে দুই ঈদেই কোচের চাহিদা বেশি থাকে। যে কারণে আমরা আগেভাগেই প্রায় ৯০টি কোচ মেরামত কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ৩০টির মতো কোচ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এসব কোচ হস্তান্তর করা হবে।’
পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপ সূত্র জানায়, বছরে প্রায় ৩৬টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিমাসে তিনটি করে ইঞ্জিন মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এছাড়াও বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনায় পড়া ইঞ্জিন বিশেষ মেরামত করা হয়। লোকবল সংকট, মালামাল সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টির কারণে নিয়মিত ইঞ্জিন মেরামত বাধাগ্রস্ত হয়।
পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপের কর্ম ব্যবস্থাপক এতেশাম মো. শফিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘এফ ও জি শিডিউলে প্রতিবছর দুটি হেভি শিডিউল হয়। প্রতি দেড় বছর অন্তরে এ শিডিউল দেয়া হয়। দুই শিডিউল মিলিয়ে ৩৬টি ইঞ্জিন প্রস্তুত করি। লোকোমোটিভ পেলেই মেরামত দ্রুত করা হয়। জনবল সংকট থাকার পরেও নিয়মিত ইঞ্জিন মেরামত করা হচ্ছে। তবে যা লোকোমোটিভ আছে তার ২০ শতাংশ অতিরিক্ত রেডি রাখার যে নিয়ম আছে সেটি হয়ে ওঠে না। ঈদে যাতে ইঞ্জিন সংকটে ভুগতে না হয় সেজন্য মেরামতে জোর দেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের আহবায়ক মো. মজিবুর রহমান ভুঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘চলার পথে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা এড়াতে হবে। তবেই ঈদযাত্রা সুন্দর হবে। চালকরা এখনো কখন ইঞ্জিন বিকল হয় এমন আতঙ্কের মধ্যে ট্রেন চালায়। ঈদে যাতে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’