ঈদযাত্রায় যাত্রী সাধারণের দুশ্চিন্তা দূর করা জরুরি

10

ঈদ কড়ানাড়ছে দরোজায়। ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ঈদ উপলক্ষে পড়িমরি নাড়িরটানে ঘরে ফেরার চেষ্টা। কিন্তু সড়ক পথে সংকটের শেষ নেই। রাস্তায় বের হলে আশানুরূপ যানবাহন নেই। যা আছে তাতে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও সড়ক পরিবহন কোম্পানিগুলো সেরকম কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ঈদযাত্রায় ঘরে পৌঁছা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ‘সোনার হরিণ’ টিকেট পাওয়া শেষে ঈদের আগে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারলেই স্বস্তি। পুনরায় ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার টেনশনও থাকে। পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ কাটাতে যতক্ষণ গন্তব্য পৌঁছা যায়নি ততক্ষণই দুশ্চিন্তা। বিশেষ করে সড়কপথে যানজট ও রেলপথে দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়ি যেতে পারলেই যাত্রীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন। কিন্তু গত শুক্রবার উভয় পথেই ঘরমুখো যাত্রীরা যানজট ও দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। আগামী ৯ কিংবা ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই বাড়ি ফিরবেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করেই যাত্রী সাধারণ যাতায়াত করেন বেশি। এই রুট ব্যবহার করেই বেশ কয়েকটি জেলায় যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই এই রুটে যাত্রীদের চাপ থাকে বেশি। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার অংশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোর থেকেই গাড়ির চাপ বাড়তে থাকায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কবলে পড়ে দীর্ঘসময় সড়কেই অবস্থান করতে হয়েছে যাত্রীদের। যানজটে আটকে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বাসের সংখ্যাই বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ‘ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। যে কারণে সকাল থেকেই যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ধীরগতিতে গাড়ি চলাচল করার কারণে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
নীলফামারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যাপক যানজট থাকায় চট্টগ্রাম ফিরতে বেগ পেতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ সড়কে আটকে থাকায় নির্ধারিত সময়ে বাড়ি ফিরতে পারি নাই। ঈদের আগে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে মানুষের কষ্ট বাড়বে। এতে ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দ দুর্বিষহ হবে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চার রুটে আটটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়াও আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনও চালু থাকবে। ঈদে প্রতিদিন এসব ট্রেনে প্রায় ১৪ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হলেও দুর্ঘটনা ও শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। যার কিছুটা ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দুটি দুর্ঘটনায় শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ফেনীর ফাজিলপুরে ডাউন চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের সাথে বালি বোঝাই একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে। গেটকিপারের ভুলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটার কারণে ট্রেন চলাচলে কিছুটা বিলম্ব ঘটে। চাঁদপুর অভিমুখী ঈদ স্পেশাল ট্রেনসহ কয়েকটি ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ে বিলম্বে। এছাড়াও গত পরশু সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়ার লংলা স্টেশনে ইঞ্জিন বিকল হয়। পরে আখাউড়া থেকে জরুরি ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে পরবর্তীতে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রীরা দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঈদের সময় যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছি। ফেনীতে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি গেটকিপারের ভুলে। তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। এবার ঈদযাত্রায় সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’ রেলে দুর্ঘটনার ঝুকি, সড়ক পথে গাড়ি ও টিকেটের সমস্যা নিয়ে যাত্রীদের তথৈবচ অবস্থা। সড়ক, রেল এবং নদীপথের পরিবহন কর্তৃপক্ষসমূহের উচিত ঈদযাত্রায় যাত্রী সাধারণের দ্রহত ও নিশ্চিত সেবায় এগিয়ে আসা।