ঈদযাত্রায় রেলে ৪ টেনশন

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান যাত্রীবাহি ট্রেনে মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রচুর। পথিমধ্যে বিকল ট্রেন আটকে থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। নিরাপদ বাহন ট্রেনের ইঞ্জিন নিয়ে এমন শোচনীয় অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন। আবার যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় কোচ দেয়া হয় কম। এই দুই কারণে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের চিন্তার শেষ নেই। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিগন্যাল ও রেল সেতুর দুরাবস্থা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবং শিডিউল বিপর্যয় এড়াতে সিগন্যালিং ও রেল সেতুসমূহে নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নির্দেশনা দিয়েছে রেলভবন। গত ৪মে রেলভবনে অনুষ্ঠিত ঈদযাত্রার প্রস্তুতিমূলক সভায় এই চার বিষয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঈদযাত্রায় যাতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার না হয় সেজন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে কোচ ও ইঞ্জিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিগন্যালিং ও সেতুর কারণে যাতে ট্রেনযাত্রা বিলম্ব ও দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে যে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে সেখানে যাত্রীরা ভালোই সাড়া দিচ্ছে। ট্রেনযাত্রায় যাত্রীদের আগ্রহ যেভাবে বেশি আছে সেভাবেই আমরা ভ্রমন নিরাপদ করতে বদ্ধপরিকর।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ২৯টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ১৫টি বিজি কোচসহ মোট ৪৪টি যাত্রীবাহী কোচ এবারের ঈদযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদায় ১৮টি মিটারগেজ ও ৯টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে এবং ট্রেন শিডিউল রক্ষায় রেলপথে পেট্রোলিং জোরদার করা হবে। রেল সেতুসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিগন্যালিং ব্যবস্থা, কোচ এবং ইঞ্জিন ট্রেনযাত্রার আগে নিবিড় পরিচর্যা ও পরীক্ষা করা হবে। দুর্ঘটনাস্থলে প্রেরণের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক রিলিফ ট্রেন প্রস্তুত থাকবে।
জানা যায়, এবারের ঈদযাত্রায় রেলে ইঞ্জিন ও কোচের পুরানো সংকটের সাথে সিগন্যাল ও রেল সেতু নিয়েও সোচ্চার রেলওয়ে। অধিকাংশ রেল দুর্ঘটনা ও শিডিউল বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে সিগন্যাল। ভুল সংকেতের কারণেই অধিকাংশ সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এখন রেল সিবিআইএসে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সংকেত দেওয়া হয়। লাইন পরিবর্তনের সময়,পয়েন্ট ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনকে চলাচলের অনুমতি দেয় না সিবিআইএস। কিন্তু এখনো পুরোনো পদ্ধতিতে পয়েন্টসম্যানরা ট্রেনকে এক লাইন থেকে অন্য লাইনে নিতে পয়েন্ট তৈরি করেন। এতে ভুল হওয়া এবং স্টেশন মাস্টাররা সঠিক সংকেত দিতে না পারায় দুই ট্রেন এক লাইনে চলে আসার ঘটনা ঘটছে। আবার পয়েন্ট ঠিকভাবে তৈরি না হওয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হচ্ছে। ঈদে যদি এরকম সংকেত ভুলে দুর্ঘটনা ঘটে তা হবে দুর্ভাগ্য। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৯টি রুটে ঝুঁকিপূর্ন রেল সেতু আছে ৫০৫টি। এরমধ্যে বড় সেতু আছে ৪৮টি ও ছোট সেতু ৪৫১টি। রেলওয়ের এই সেতুগুলোর অধিকাংশই নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ শাসনামলে। সেতুগুলোর অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে চলা সেতুতে মাঝেমধ্যে দূর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া অনেক সেতু রেল ইঞ্জিনের ভার নিতে পারে না। সেতুতে ট্রেন উঠলেই গতি কমাতে বাধ্য হয় ট্রেনচালকরা।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সংকেত ও সেতুর কারণে যাতে কোনরূপ দুর্ঘটনা এবং শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান সংকেত এবং টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীকে পৃথক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে কারণে এই দুই বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে।
এদিকে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। আজকে বিক্রি হবে ৩জুনের টিকিট। আগামীকাল বিক্রি হবে ৪জুন ও ২৬ মে বিক্রি হবে ৫ জুন ও ২৭মে ৬জুনের টিকিট বিক্রি হবে। একইভাবে ঈদের পরে ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৩০মে। ওইদিন ৯ জুনের অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাবে। ১০ জুনের টিকিট ৩১ মে, ১১ জুনের টিকিট ১ জুন, ১২ জুনের টিকিট ২ জুন, ১৩ জুনের টিকিট ৩ জুন, ১৪ জুনের টিকিট ৪ জুন এবং ১৫ জুনের অগ্রিম টিকিট ৫ জুন পাওয়া যাবে।