‘৬১ হিজরিতে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ময়দানে নবী পরিবার ও হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) ওপর জঘন্য নির্মমতা-নৃশংসতা দেখিয়েছিল পাষন্ড ইয়াজিদ। জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে মসনদে বসে দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়ে ইয়াজিদ ঘৃণ্য নজির সৃষ্টি করেছিল। ইসলামের নামে উগ্রতা সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়ে যুগে যুগে ধিক্কারের পাত্র হয়ে আছে পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ। অন্যদিকে ইসলাম নির্দেশিত সত্য পথ এবং ন্যায়নীতি ও ইনসাফভিত্তিক দর্শনকে সমুন্নত করে কারবালা প্রান্তরে হাসিমুখে জীবন দিয়েছেন প্রিয় নবীর (দ) দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও নবী পরিবার’।
গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিলের ৬ষ্ঠ দিনে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন। শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ) স্মরণে চলছে ১০ দিনব্যাপী ৪০তম এই আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল। গতকাল বুধবার ৬ষ্ঠ দিনে মাহ্ফিলে হাজারো মানুষের ঢল নামে। মাহ্ফিলে মসজিদ কমপ্লেক্সের নিচতলায় পর্দা সহকারে নারীরাও মাহ্ফিলের বক্তব্য শ্রবণ করার সুযোগ পান।
গতকালের মাহ্ফিলে সভাপতিত্ব করেন বোয়ালখালী হাওলা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন পীরজাদা মাওলানা সৈয়দ নঈমুল কুদ্দুস আকবরী। তিনি বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত হননি। বরং ইয়াজিদই অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে জনগণের ওপর দুঃশাসন চাপিয়ে দিয়ে ধিকৃত হয়ে আছে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যে ক্ষমতা চায় বা নিজ থেকে কোনো দায়িত্ব নিতে চায় তাকে ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। আর যে ক্ষমতা চায় না যোগ্যতা থাকলে তাকেই গুরু দায়িত্ব দিতে হয়। এটাই ইমাম হোসাইনের (রা.) দর্শন। সেদিন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ক্ষমতার জন্য ইয়াজিদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হননি। বরং দুরাচারী পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের নিপীড়নমূলক দুঃশাসন রুখে দিয়ে জনপ্রত্যাশার আলোকে ইসলামের সত্য ও ন্যায়ের পতাকাই উড়িয়েছেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। মাহ্ফিলে কারবালা চেতনা ও বর্তমান মুসলিম সমাজ বিষয়ে আলোচনাকালে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা মোশাররফ হোসেন হেলালী বলেন, কারবালা মানে নীতি ও সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাবতীয় মিথ্যা ও অন্যায় রুখে দাঁড়ানো। মুসলিম সমাজকে কারবালার চেতনায় জেগে উঠতে হবে।
আয়াতে তাতহির ও আয়াতে মুবাহালার তাফসির বিষয়ে আলোচনাকালে গহিরা আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, আহলে বায়তের মহব্বতের মাধ্যমে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে, রিজিক বাড়ে, জান্নাত পাওয়া যায়।
হোসাইনি চরিত্রে উজ্জীবিত হওয়া কেন প্রয়োজন বিষয়ে আলোচনাকালে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আযহারী বলেন, ইমাম হোসাইন (রা.) ব্যক্তির নাম নয়, ঈমানের নাম। হোসাইনী কাফেলার রক্তের বদৌলতে উম্মতে মুহাম্মদী জান্নাতের হকদার হবে এটাই কারবালার দর্শন।
আহলে বায়তের মর্যাদা নিয়ে আশেকানে আউলিয়া ফাযিল মাদ্রাসার প্রভাষক আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ কাদেরী বক্তব্য রাখেন। মাহ্ফিলে অতিথি ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ফকিহ আল্লামা মুফতি কাযী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী ও ডাইরেক্টর আক্তার পারভেজ, ঈছাপুর দরবার শরীফের শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ এহছানুল করিম, ফটিকছড়ি শফিকিয়া দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন পীরে তরিক্বত আল্লামা মুহাম্মদ ফখরুদ্দিন কাদের চৌধুরী, আশরাফিয়া সিলসিলার মুহাম্মদ রক্তিম আশরাফি, রাজনীতিবিদ মঞ্জরুল আলম মঞ্জু। পর্ষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিলশাদ আহমেদের নির্মিত বিগত দিনের চমৎকার একটি ভিডিও ডকুমেন্টরি পরিবেশিত হয়। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মুহাম্মদ এরশাদ। নাতে রাসূল (দ) পরিবেশন করেন সায়ের মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন। ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মুহাম্মদ ছালামাত উল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহ্ফিলে পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহ্ফিলের প্রধান সমন্বয়ক ও পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, খোরশেদুর রহমান, মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন, প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদ, জাফর আহমদ সাওদাগর, মাইনুদ্দীন মিঠু, শফিক আহম্মদ, ফজলুর রহমান সাহেদ, মুহাম্মদ মামুনসহ বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন, মতোয়াল্লী ও ঈমামগণ। হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণির পরিবেশনায় সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি