ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশে ব্যাপক অবদান রেখেছেন তৈয়্যব শাহ

1

আল্লামা তৈয়্যব শাহ্’র ৩৩তম বার্ষিক ওরশ শরীফ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আওলাদে রাসুল পীরে বাঙ্গাল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ ছাবের শাহ্ (মা.জি.আ) বলেছেন, হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) ও আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) যে সিলসিলা আমাদের দিয়েছেন, এর মাধ্যমে আমরা আজ ইসলামের সঠিক আক্বিদায় ঐক্যবদ্ধ। তিনি এ সিলসিলার কার্যক্রম প্রচারে যারা অবদান রেখেছেন তাদের বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আজ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)-এর ওরশ মোবারক উদযাপন করছি। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)-এর অবদানকে, তিনি হুজুর কেবলার যে মকসুদ আল্লাহ্ ও রাসুলের সন্তুষ্টি তাতে আমরা ওয়াদা করেছি তা যথাযথ পালন করাই ওরশের সার্থকতা। তিনি বলেন, হুজুর কেবলার মাধ্যমে যে আদর্শ, দর্শন ও পথ দেখিয়েছেন সেই সিরাতুল মুসতাকিমের পথে চলতে হবে। এ পথ রাসুলেপাক (দ.)-এর নির্দেশিত হযরত গাউসুল আযম দস্তগীর, আবদুর রহমান চৌহরভী ও সিরিকোটি (রহ.) অনুসৃত। তিনি বলেন, সিরিকোটি (রহ.) বাংলাদেশ তশরিফ রেখে এমন একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন যা সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। তেমনিভাবে আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ঢাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, জশনে জুলুস ও গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জামেয়া আনজুমান, গাউসিয়া কমিটিকে হযরাতে কেরামের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এহসান উল্লেখ করে এ প্রতিষ্ঠানসমূহ আহলে সুন্নাত আক্বিদা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখছে। তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআন-হাদীস ও মহানবী (দ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা এবং জামেয়া, আনজুমান ও গাউসিয়া কমিটির সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার আহŸান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আল্লাম তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন জশনে জুলুস বের করার জন্য, সেই জুলুস আজ বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আল্লামা সিরিকোটি (রা.) ও আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) এদেশে এসে ইসলামের যে শাশ্বত বাণী প্রচার করেছেন এবং এ এলাকায় এসে ইসলামী শিক্ষার জন্য জামেয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আমাদের জন্য এহসান। তিনি বলেন, নবীর আওলাদগণ এদেশে এসে নবীজির সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) সুন্নাতে রাসুলের অনুসরণের শিক্ষা দিয়েছেন।
স্বাগত বক্তব্যে আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা শরীয়ত সম্মতভাবে জশনে জুলুছ থেকে শুরু করে সকল ওরশ মোবারক উদযাপন করি। কিন্তু ওরশ আনজুমানের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়; আনজুমানের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার, যার উপর ভিত্তি করে শাহানশাহ্-এ সিরিকোট এজামেয়া প্রতিষ্ঠা করেন। যেকোন মসিবতে জামেয়ার জন্য মান্নত করবেন, পূরণ হলে সাথে সাথে তা আদায় করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মনজুর আলম (মনজু) বলেন, বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের প্রচার-প্রসারে আউলিয়া-কেরামদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) এদেশে এসে আহলে সুন্নাতের আদর্শভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে যে রূপরেখা দিয়েছেন, তা আমাদের জন্য পাথেয়।
ওরশ মাহফিলে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এরশাদ উল্লাহ, আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ফকিহ মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভী ও ঢাকা গাউসুল আযম রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী কাশেমী। সঞ্চালন করেন ট্রাস্ট’র জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ সিরাজুল হক ও জামেয়ার আরবি প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান আল-কাদেরী। উপস্থিত ছিলেন আনজুমান ট্রাস্টের এডিশনাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ সামশুদ্দীন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এস.এম গিয়াস উদ্দীন (শাকের), ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মোহাম্মদ কমর উদ্দীন (সবুর), পেয়ার মোহাম্মদ, জামেয়ার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান, হাফেজ মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারি, মুফতি কাজী আবদুল ওয়াজেদ, মুহাম্মদ সাহাজাদ ইবনে দিদার, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ তৈয়বুর রহমান, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, শেখ নাসির উদ্দিন আহমেদ, লোকমান হাকিম মো. ইব্রাহিম, নূর মোহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, মুহাম্মদ আবদুল হাই (মাসুম), মুহাম্মদ সাদেক হোসেন (পাপ্পু), মুহাম্মদ নুরুল আমিন, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, মুহাম্মদ মাহাবুব ছফা, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহব্বায়ক আর.ইউ চৌধুরী শাহীনসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম।
মাহফিল শেষে সালাতুস সালাম, কিয়াম ও মোনাজাতের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ড. আ.ত.ম লিয়াকত আলী। এরপর উপস্থিত সকলের মাঝে তাবারুক বিতরণ করা হয়। খবর বিজ্ঞপ্তির