ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বৃষ্টির মতো রকেট ছুড়ছে ইসরায়েল। টানা সপ্তম দিনের মতো সেখানে চলছে হামলা। উপত্যকাটিতে রোববার রাতে এক ঘণ্টায় দেড় শতাধিক রকেট ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এদিন ভোরের হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক। ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে হতাহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে রোববারের হামলাকে ২০০০ সালে হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ‘সবচেয়ে বড় হামলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার আল-ওহেদা শহর লক্ষ্য করে বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে। এতে আবাসিক ভবন, অবকাঠামো ও সড়ক ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় ১৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে সংবাদমাধ্যম বলছে, নিহতের সংখ্যা ৩৩ জন।
ইসরায়েলের নারকীয় তান্ডবে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ১৮১ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৪১ জন শিশু। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ।
কাতারভিত্তিক আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েল এদিন হামাস নেতা ইয়াহিয়া আল সিনওয়ারের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের বিমান হামলার বিপরীতে গাজা থেকে রকেট হামলা অব্যাহত রয়েছে। এসব রকেটের অধিকাংশ ইসরায়েল ভূপাতিত করতে সক্ষম হলেও কিছু কিছু সরাসরি দেশটির বিভিন্ন শহরের ভবন, যানবাহনে আঘাত হানছে। এতে ইসরায়েলজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে হামাসের রকেট হামলায়। এদের মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে। খবর বার্তা সংস্থার
জেরুজালেমের আল-আকসায় জুমাতুল বিদা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের শুরু। এরপর থেকে তা দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবারের (১০ মে) পর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩শ এর বেশি রকেট ছোড়া হয় গাজা থেকে। আর ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে বিমান হামলা।
এদিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। এমনকি দেশটির অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা।
গাজায় আল-জাজিরা, এপির কার্যালয় নিশ্চিহ্ন : গাজার একটি ১২ তলা ভবনকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। আল-জালা নামের ওই ভবনেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার কার্যালয় ছিল। গত শনিবার বিমান হামলা চালানোর আগে ইসরায়েল ভবনটি থেকে বেসামরিকদের সরে যাওয়ার জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছিল।
ভবনটিতে এপি ও আল-জাজিরার কার্যালয় ছাড়াও আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এবং অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। ভবনটির মালিক ভবনের সঙ্গে হামাসের সংশ্লিষ্টতা উড়িয়ে দিয়েছেন।
ভবনটিতে ইসরায়েলি হামলায় এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো গাজার একটি বহুতল ভবনে আঘাত হেনেছে। ভবনটিতে হামাসের গোয়েন্দা কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক সরঞ্জাম ছিল বলেও দাবি করছে তারা।
হামলার আগে ভবনটির বেসামরিক নাগরিকদের হামলার ব্যাপারে জানানো হয়েছিল, যেন তারা ভবনটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, বলেছে তেল আবিব।
এপি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি প্রুট ইসরায়েলের এ হামলায় ‘স্তম্ভিত’ হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভবনটিতে এপি’র ডজনখানের সাংবাদিক ও ফ্রিল্যান্সার থাকলেও হামলার আগে আগে তারা সেখান থেকে সরে যেতে সক্ষম হয় বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা হামলার আগে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে বলেছিল।
আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মোস্তেফা সৌয়াগ আল-জালা ভবনে হামলাকে ‘বর্বর’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, জঘন্য এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল গণমাধ্যমকে চুপ করিয়ে দেওয়া এবং গাজার জনগণের অবর্ণনীয় কষ্ট ও হত্যাযজ্ঞকে আড়াল করা।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ‘পুরোদমে’ চলছে। যতদিন প্রয়োজন ততদিন তা চলবে।
শনিবার টিভিতে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু একথা বলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদে কয়েকঘন্টার বৈঠকের পর দেওয়া ওই বক্তব্যে নেতনিয়াহু বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের অভিযান চলছে। ইসরায়েলের মাটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যতদিন প্রয়োজন ততদিন পর্যন্ত আমরা তা চালিয়ে যাব।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল ‘হামলাকারীর’ উচিৎ পাওনা বুঝিয়ে দিতে চায় এবং এমন ব্যবস্থা করতে চায় যাতে ভবিষ্যতে এরকম সাহস তারা আর না করে। চলমান সংঘর্ষের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী নয়; বরং ইসরায়েলিদের ওপর হামলাকারীরাই দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সহিংসতা গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক অনলাইন বৈঠকে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের এই সহিংসতা গোটা অঞ্চলের জন্যই হুমকি।
তিনি বলেন, এ সহিংসতা পরিস্থিতিকে এমন এক নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে যা হয়ত আর নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
বেড়ে যেতে পারে উগ্রবাদও। আর তা কেবল অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল কিংবা ইসরায়েলেই নয় বরং গোটা অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।