ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের

40

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের আগে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রূতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, সেনা প্রত্যাহার এমনভাবে করা হবে যেন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্য মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে ‘পুরোপুরি আশ্বস্ত’ করা যায়। এর আগে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে পরাজিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীদের সুরক্ষায় তুরস্কের কাছে নিশ্চয়তা চান। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় সেনা প্রত্যাহারের আগে ইসরায়েলসহ মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেন জন বোল্টন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আইএসকে পরাজিত করা এবং তারা যেন পুনরুজ্জীবিত হতে না পারে, ফের কোনও হুমকি হয়ে উঠতে না পারে তার নিশ্চিতের পরই সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। এ অঞ্চলে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্য মিত্রদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। আইএসের বিরুদ্ধে অন্য যারা (সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী) লড়াই করেছে তাদের প্রতিও খেয়াল রাখা হবে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ইরানের হুমকি থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় কাজ করছে তার দেশ। এ লক্ষ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্কোন্নয়নে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টিভি চ্যানেল নিউজম্যাক্স’কে দেওয়া সাক্ষাতকারে পম্পেও বলেন, সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করা হলেও দেশটিতে ইরানের অবস্থানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যে কোনও উদ্যোগে সমর্থন দেবে ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পরও দেশটির পূর্বাঞ্চলে বোমা হামলা জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস প্রভাবিত এলাকাগুলোতে এ হামলা চালানো হচ্ছে। ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর সিরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা সিরিয়ায় আইএস-কে পরাজিত করেছি। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে শুধু আইএস-কে হটানোর জন্যই তাদের সেখানে (সিরিয়া) রাখা হয়েছিল।’
সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় তিন সূত্রকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, স¤প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয়েছে ইরাক সীমান্ত সংলগ্ন ইউফ্রেটিস নদীর নিকটবর্তী আল কাশমাহ গ্রামে। মার্কিন বিমান হামলা ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর গোলা হামলায় বেসামরিক নাগরিক ও আইএস যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রামে পালিয়েছে। ইউফ্রেটিস নদীসংলগ্ন গ্রামগুলোতে জড়ো হয়েছে আইএস সদস্যরা। দের আজ জোর এলাকার এক মানবাধিকারকর্মীর তথ্য অনুযায়ী, এসব এলাকায় এখন ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার মানুষ অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এসব এলাকার নিরস্ত্র মানুষদের মার্কিন বোমা হামলা থেকে বাঁচার কিংবা নিজেদের লুকিয়ে রাখার কোনও জায়গা নেই।’ যুক্তরাষ্ট্র ও আইএস-এর পাশাপাশি সিরীয় সরকারের হামলার কবলেও পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। অপারেশন রাউন্ডআপ নামের অভিযানের অংশ হিসেবে গত নভেম্বর থেকে ইউফ্রেটিসের আশপাশে আইএস নিয়ন্ত্রিত গ্রামগুলোতে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অপারেশন রাউন্ডআপ পরিচালনা করতে গিয়ে বেসামরিক এলাকায়ও হামলা হচ্ছে। একটি হাসপাতালও হামলার শিকার হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন অনেকে। সবচেয়ে আলোচিত নাম পদত্যাগী প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস। আফগানিস্তান ও সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের মতো কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতার সূত্রে তিনি পদত্যাগ করেন। ট্রাম্প তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের হাতে সিরিয়ায় থাকা ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের নির্মূল করার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা হয়ে দেখা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দিরা।