পূর্বদেশ ডেস্ক
ইসরায়েলে অন্তত ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনযোগে হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। একই সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিজারিয়ার বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এই হামলায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। খবর বিবিসি বাংলার
গতকাল শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, উত্তর ইসরায়েলের সিজারিয়া শহরের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে যখন এই হামলা চালানো হয়েছে তখন ওই ভবনে নেতানিয়াহু ছিলেন না।
তবে, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনযোগে হামলার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর আখোতে একজন নিহত হয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্রটি সরাসরি তার গাড়িতে আঘাত হানে, ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা মেগান ডেভিড আদমের (এমডিএ) বরাত দিয়ে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তিকে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর ইসরায়েলের আরেক বন্দর শহর হাইফা এবং পশ্চিম গ্যালিলি অঞ্চলে আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। হাইফা জেলার আরেক শহর কিরইয়াত আতায় বাড়িতে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রের শার্পনেলের আঘাতে ২৮ বছর বয়সী এক তরুণ গুরুতর আহত হয়েছেন। এর পাশাপাশি এখানে চল্লিশোর্ধ এক নারী ও এক পুরুষও আহত হয়েছেন।
শহরটিতে আরও পাঁচজন তীব্র উদ্বেগে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে এমডিএ জানিয়েছে। এখানে একটি আবাসিক ভবনের সামনে পার্ক করে রাখা কয়েকটি গাড়ি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়।
পশ্চিম গ্যালিলিতে পৃথক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি রাস্তায় আঘাত হানে। এখানে আরও চারজন আহত হয়েছেন, জানিয়েছে এমডিএ।
হাইফা অঞ্চল লক্ষ্য করে অন্তত ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলে আইডিএফ জানিয়েছে। হিজবুল্লাহ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এদিকে গাজায় একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২১ জন নারীসহ অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে। শুক্রবার উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনাটি ঘটে। গাজার হামাস পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিসের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবারের বিমান হামলায় ৮৫ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। অনেকের অবস্থা গুরুতর।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার উত্তর ইসরায়েলি শহর সিজারিয়াতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বাড়ির দিকে একটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। যখন এই হামলাটি চালানো হয় তখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওই ভবন কিংবা এর আশেপাশেও ছিলেন না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়েছে, হামলায় যে ভবনটি আঘাত হেনেছে সেটি নেতানিয়াহুর বাড়ির অংশ।
টাইমস অব ইসরায়েলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় কোনো আহতের খবর পাওয়া যায়নি এবং প্রধানমন্ত্রী ওই সময় বাড়িতে ছিলেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, লেবানন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ড্রোনটি। তবে এটি অন্য একটি ভবনে আঘাত হানে। সেই ভবনটিতে কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হয়নি।
একই সময় মোট তিনটি ড্রোন ছোড়া হয়েছিল ইসরায়েলের দিকে। তবে ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্য দু’টি ড্রোন ইসরায়েলি ভ‚খন্ডে প্রবেশের আগেই ঠেকিয়ে দেয়।
ওই হামলার কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ।
ইসরায়েলি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এবং পুলিশ বলছে, যে উপক‚লীয় শহর সিজারিয়ায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেই সিজারিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ‘হলিডে হোম’ বা অবকাশকালীন বাড়িয়ে রয়েছে।
তবে এই হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে এর দায় স্বীকার করেনি ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ।
গত অক্টোবর থেকে হেজবুল্লাহসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসরায়েলের সাথে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবুল্লাহ অন্তত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, শুক্রবার রাতে লেবানন থেকে চালানো এই ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশ প্রতিহত করেছে ইসরায়েল। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু খোলা জায়গায়ও আঘাত হেনেছে বলে দাবি আইডিএফ’র।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, পশ্চিমের গ্যালিলি অঞ্চলে শত্রুপক্ষের একটি বিমান শনাক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তদন্ত করছে ইসরায়েল বাহিনী।
এছাড়া বিমান শনাক্তের কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে আরও একটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে টেলিগ্রামে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে রাতভর রকেট হামলা চালানো হয়েছে।
গত বুধবার হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এ হত্যাকাÐের প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাসও।