জসিম উদ্দিন মনছুরি
৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে গাজা থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনের মত ইসরায়েলি নাগরিককে বন্দি করে। হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অনবরত বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। বিমান হামলা ও স্থলযুদ্ধে এই পর্যন্ত প্রায় ৫০০০০ গাজাবাসী শাহাদাত বরণ করেন। এক লক্ষেরও অধিক পঙ্গুত্ববরণ করেন। বিশ লাখের অধিক জনসংখ্যার গাজা এখন প্রায় নিচিহ্ন। গাজায় কোন স্থাপনা নেই বললেই চলে। ইসরায়েলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জু বাইডেনের শাসনামলে শুরু হওয়া হামলা ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি হলেও ইসরায়েলি বর্বরতার এখনো শেষ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র গাজাকে তাদের অধীনে আবাসন প্রকল্প করার দুর্বিসন্ধিতে মেতে উঠে। কথিত আছে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্থায়ী প্রভাব বিস্তারের জন্য ইসরায়েলকে প্রচুর সমরাস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। তারা ইসরায়েলকে শক্তিশালী করার জন্য ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ইতিহাস ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রিফিউজি ইহুদিদের জাতিসংঘের অধীনে আশ্রয়ন প্রকল্প হিসেবে ফিলিস্তিনে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা শক্তি সঞ্চয় করে ব্রিটিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিনিদের সাথে বিরোধ বেধে ইসরায়েল নামে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে পথচলা শুরু করে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের যাত্রা শুরু হয়। ইসরায়েল রাষ্ট্রকে কোন মুসলিম দেশ কিংবা আরববিশ্ব কখনো মেনে নিতে পারেনি। ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের সংঘাত লেগেই আছে। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল ও আরবদের মাঝে ৬ দিনব্যাপী যুদ্ধে ইসরায়েল মিশরের সিনাই উপত্যাকা, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর , গাজা ও জেরুজালেম দখল করে নেয়। ১৯৬৭ সালের আগ পর্যন্ত ইসরায়েল রাষ্ট্রের আয়তন ছিলো প্রায় ২০৭৭০ বর্গ কিলোমিটার। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আয়তন ছিল ৬০২০ বর্গ কিলোমিটার। ইসরায়েলের দখলে চলে যায় তিনটি ধর্মের পবিত্র স্থান বায়তুল মোকাদ্দাস। বাইতুল মুকাদ্দাস উদ্ধার করার জন্য এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য তখন থেকে স্বাধীনতাকামীরা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই দেশই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে গণ্য করে। ইসরায়েল স্বাধীন ফিলিস্তিনকে তাদের জন্য হুমকি মনে করে। এর যেরে কারণে-অকারণে কট্টরপন্থী ইহুদীবাদীরা ফিলিস্তিনে বিমান হামলা ও আগ্রাসন চালিয়ে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। চতুর্পাশ্বে আরবরাষ্ট্র বেষ্টিত ক্ষুদ্র ইসরায়েল রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বরতা চালিয়া আসছে। আরবরা যেখানে ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ার কথা সেখানে পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের বর্বরতাকে মৌন সমর্থন দিয়ে আসছে। শক্তিশালী মিশর ১৯৭৯ সালে কেমড্যাবিট চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সাথে শান্তি চুক্তি স্থাপন করেন। বিনিময়ে মিশরকে সিনাই উপত্যকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে মিশর ইসরায়েলিদের মিত্র হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ইসরায়েলের সীমাহীন বর্বরতায় আরববিশ্বের নিরব ভূমিকার কারণে ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনের উপর বর্বরতা চালিয়ে আসছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। আরববিশ্ব আরাম আয়েস ও বিলাসী জীবন যাপনের জন্য ক্ষমতাকে আকড়ে রাখতে ইসরায়েলকে চরমভাবে ভয় পায়। আরববিশ্বের অধিকাংশ দেশের সাথে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তন্মমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, জর্দান ও সৌদি আরব। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্র গঠন ছাড়া কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা। কিন্তু ইসরায়েলিরা রিফিউজি হয়ে এসে ফিলিস্তিনের মাটি থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে উচ্ছেদ করে নিজেরাই স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে তারা কখনো মেনে নিতে পারেনা। বিশ্বের ১৯৩ টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩ টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরাষ্ট্র হিসেবে থাকলেও জাতিসংঘ কখনো ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বলার সাহস পায় না। বরং স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের তারা জঙ্গি আখ্যা দিয়ে দমন পিড়নে সহায়তা করে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ফিলিস্তিনের গাজাকে নিজেদের আন্ডারে নিয়ে সেখানে অবকাশ যাপন করার জন্য হীন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এবং গাজাবাসীকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে গাজাকে দখলে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী রাষ্ট্র ইরান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের অবিরত সহায়তা প্রদান করলেও আরববিশ্বের কোন রাষ্ট্রই হামাসকে কিংবা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সহায়তা দূরে থাক সমর্থনটুকু পর্যন্ত দেয়নি। ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে অসলো চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েলের ষড়যন্ত্রের কারণে সেই চুক্তি ভেস্তে যায়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ক্ষুদ্র একটি রাষ্ট্র হলেও সেখানে বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজায় ইসরায়েল অনবরত হামলা চালিয়ে গেলেও কখনো প্রতিবাদ কিংবা নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি। ২০০৬ সালের নির্বাচনে গাজায় হামাস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে হামাসের সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়ান মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সংঘর্ষে হামাস জয় লাভ করলে তখন থেকে গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রক্তখেখু বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কট্টরপন্থী ইহুদি হওয়ায় তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই গাজাবাসীর প্রতি বিরামহীন আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বারবার সংঘাতে জড়ালেও কিছুদিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা অতর্কিত ইসরায়েলের ফেস্টিভাল অকেশনে হামলা চালিয়ে ১২০০ ইহুদিকে হত্যা করে বলে কথিত আছে এবং ২৫০ জন ইহুদিকে বন্দি করে। বীভৎস হায়েনার উপর ঢিল ছুড়ার মতো হামাস নিজেদের বিপদ ডেকে আনে। এরপর থেকে ইসরায়েল অনবরত বিমান হামলা চালিয়ে ও স্থল যুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে হাজার হাজার বেসামরিক লোক ও নারী পুরুষ এবং নিষ্পাপ শিশুদেরকে হত্যা করে চলেছে। যে আগ্রাসন এখনো বন্ধ হয়নি। এমনকি গাজায় যাতে কোন ত্রাণ সাহায়তা না পৌঁছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে গাজাকে অবরোধ করে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখে। ফলে গাজায় শুরু হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। পানীয় জলের মারাত্মক সংকট। খাদ্য সংকট ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকটে অনেক গাজাবাসী মৃত্যুবরণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের অনবরত বিমান হামলা ও সাইবার আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গাজা। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা রকেট হামলা চালালেও তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম আয়রনডোম দিয়ে অধিকাংশ রকেট আকাশে ধ্বংস করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইয়ামেনের হুতিরা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করলেও ইসরায়েল নিরবিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহ ও হুতিরা স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সাম্প্রতিক ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালায়। হুতিরা হাইপারসনিক কেপাণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। বাণিজ্যিক অঞ্চল লোহিত সাগর ও ভ‚মধ্যসাগরে মার্কিন ও ইসরায়েলি জাহাজে হামলা চালিয়েও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যে , মাইক্রোসফট, গুগুল ও এমাজনের মতো কোম্পানিগুলো ইসরায়েলকে তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করছে। ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ করে তাদের উপর তথ্যপ্রযুক্তির হামলা চালিয়ে ব্যাপকভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। মাইক্রোসফটের কয়েকজন কর্মচারী প্রতিবাদস্বরূপ চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। আরববিশ্বের সৌদি আরব, মিশর কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যদি হামাসের সাথে কিংবা স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য একাত্মতা প্রকাশ করতো তাহলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু তারা নিজেদের রাজতন্ত্রের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ায় স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে প্রতিরোধ চালিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চির শত্রু শক্তিশালী ইরান প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে হামাস এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইরান তাদেরকে অস্ত্র দিয়ে এতদিন পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলে ধারণা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ফোরক মন্তব্যে কিছুটা হলেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তিনি এক নথিপত্রে উল্লেখ করেন ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য হামাস ইরানের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিলো।কিন্তু তা কতটুকু সত্যি তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতির আক্রমণে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা জানা সম্ভব হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চরম উত্তেজনায় ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করার কথা। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমকে শক্তিশালী করার জন্য থার্ড পাঠিয়ে দেয় ইসরায়েলের কাছে। ছোট্ট ইসরায়েলের এত শক্তি কোথায় সবার প্রশ্ন জাগে? মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী প্রভাব বিস্তারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ব্যাপক হারে সমরাস্ত্র ও মারণাস্ত্র দিয়ে থাকে। ওপেন সিক্রেট হলেও ইসরায়েলের কাছে রয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক বোমা। যদিও এই নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের তেমন একটা মাথাব্যথা নাই। ইরান শান্তির জন্য পারমানবিক স্থাপনা চালিয়ে আসলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চরম মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরানের পারমাণবিক চুল্লি। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে প্রায় ছয়টি পারমাণবিক বোমা বানাবার কাছাকাছি চলে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল মনে করে পারমাণবিক বোমা যদি ইরান তৈরি করে তাহলে তা ইসরায়েলের জন্য সরাসরি হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র ইসরায়েলকে বাঁচাবার জন্য ইরানের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের বর্বরতা বিশ্ববাসীর নজর কাড়লেও আরববিশ্ব এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে। এই পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৫০০০০ এর অধিক ফিলিস্তিনি শাহাদাত বরণ করেছে। এক লাখেরও বেশি মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। দেশান্তরী হয়েছে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল রাফার অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এত সংগ্রাম এত যুদ্ধের পরও ফিলিস্তিন কেন স্বাধীন হতে পারছে না প্রশ্ন দেখা দেয় ? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আরববিশ্বের অনৈক্য। ইসরায়েলের সাথে গোপন আঁতাত। ফিলিস্তিনিদেরকে জোরালো ভাবে সমর্থন না দেওয়া ইত্যাদি কারণ বলে জানা যায়। গাজা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্ফোরক মন্তব্যে কিছুটা টনক নড়লেও সৌদিআরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব লীগের বৈঠকে শুধুমাত্র ব্রিফিং এর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। সৌদি আরবে আরব লীগের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আরববিশ্ব গাজা বাসীদের সেখানে রেখে সংস্কারের কাজ চালাবে। যদিও এটা কিঞ্চিত হলেও প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু আরববিশ্ব যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে নিজেদের আকাশসীমা ও স্থলসীমা ব্যবহার করতে না দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কোণঠাসা হয়ে পড়তো। এবং ইজরায়েল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হতো।কার্যত: কোন আরবরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেনি। ইরান জোরালোভাবে সমর্থন করে গেলেও ইরানের সাথে রয়েছে আরববিশ্বের সীমাহীন দ্ব›দ্ব। এখন সময় এসেছে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনকে জোরালোভাবে সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলকে প্রতিহত করা। ইসরায়েল ও আমেরিকার পণ্য বর্জন করে তাদের ব্যবসায় ধ্বস নামিয়ে দেওয়া। বহির্বিশ্ব ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করায় তাদের ব্যবসায় কিছুটা হলেও ধস নেমেছে। বিগত কয়েক মাসে তাদের ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। মুসলিম বিশ্বের কোনো কোনো ইসলামি পÐিত ইসরায়েলের সাথে জেহাদ করা ফরজ বলে ঘোষণা দিলেও কেউ কেউ তার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। এককথায় বলা যায় মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ও অসহযোগিতার কারণে মুসলমানদের পবিত্র স্থান বায়তুল মোকাদ্দাস ও পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন স্বাধীন হতে পারছে না। বলা যায় আরববিশ্ব ও মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ও জোরালো সমর্থনের অভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। স্পষ্ট করে বললে বলা যায় আরববিশ্বের হটকারিতা স্বাধীন ফিলিস্তিনের অন্তরায়।
লেখক : প্রাবন্ধিক