ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি

0

পূর্বদেশ ডেস্ক

পেন্টাগনের মূল্যায়ন বলছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের চালানো বিমান হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি। এই হামলা শুধুমাত্র দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম শুধুমাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে। এর আগে গত শনিবার অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই হামলাকে অত্যন্ত সফল হামলা বলেও জানিয়েছিল। কিন্তু মাত্র তিনদিনের মাথায় পেন্টাগনের এই নতুন তথ্য জানাচ্ছে। খবর বিবিসি।
পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা ডিআইএ এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ এই হামলায় ধ্বংস হয়নি। গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির সহযোগী সিবিএস নিউজকেও এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে হোয়াইট হাউস গোয়েন্দাদের এই মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হেয় করার চেষ্টা করার জন্যই এটি বলা হচ্ছে।
এর আগে ট্রাম্প দাবি করেছেন, শনিবারে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ হয়েছে।
পেন্টাগনের এই তথ্যের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রæথ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদন সত্যি নয়। তারা সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে সফল একটি অভিযানকে হেয় করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান- এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপ করে। যা ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট মাটি ছেদ করে বিস্ফোরিত হতে সক্ষম।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এই হামলা করতে ব্যবহার করা হয়েছিল অত্যাধুনিক বি-টু বোমারু বিমান।
পেন্টাগনের মূল্যায়ন কী বলছে? : হামলার তিন দিনের মাথায় পেন্টাগনের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ ধ্বংস হয়নি। এতে বলা হচ্ছে, ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি মূলত স্থলভাগের অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এছাড়া ইরানের দুটি পারমাণবিক স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, ভূগর্ভস্থ মূল স্থাপনাগুলো অনেকটাই অক্ষত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে মাত্র, সর্বোচ্চ এইটুকুই।
ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার বিষয়টি নির্ভর করবে দেশটি খনন এবং মেরামত করতে কত সময় নেয় তার উপর।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির সহযোগী সিবিএসকে নিশ্চিত করেছে যে, হামলার আগেই ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের কিছু অংশ স্থানান্তরিত করেছিল।
গত শনিবার এই হামলা চালানোর আগেই মার্কিন ৩০ হাজার পাউন্ডের ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমাই একমাত্র অস্ত্র বলে মনে করা হয়েছিল।
শনিবারের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন সাংবাদিকদের জানান, সবগুলো স্থাপনাতেই ‘চরম ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংস’ হয়েছে।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোরদোর পারমাণবিক স্থাপনার দুটি প্রবেশপথের আশপাশে ছয়টি নতুন গর্ত এবং ধুলোমাখা ধ্বংসস্তূপ। তবে স্যাটেলাইট ইমেজের সেই ছবিগুলো দেখে এটা বোঝা সম্ভব ছিল না যে ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতখানি।