নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন রুটে ট্রেন চালুতে ইঞ্জিন সংকটই প্রধান বাধা। যাত্রী চাহিদা থাকার পরেও অনেক রুটে ইঞ্জিন ও কোচ সংকটের কারণে নতুন ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না। নতুন রুটে ট্রেন চলাচল নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই ইঞ্জিন সংকটকেই সামনে আনা হয়। নতুন রেল লাইন চালু হলেও নতুন ট্রেন চালুর উদ্যোগ খুব কম। চলতি মাসেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুটি নতুন ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত আসার পরপরেই ইঞ্জিন নিয়ে রেলের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। চট্টগ্রামে প্রায় ৬৭ শতাংশ ইঞ্জিন কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। অনেক ইঞ্জিন চালু থাকলেও তা চলারপথে বিকল হয়। ওয়ার্কশপেও মেরামতের অপেক্ষায় অকেজো পড়ে আছে কয়েকটি ইঞ্জিন।
রেল কর্মকর্তারা জানান, পূর্বাঞ্চলে দৈনিক ১০৪টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ইঞ্জিন ৯০-৯৫টি পাওয়া যায়। যে কারণে ট্রেন পরিচালনায় হিমশিম খেতে হয়। ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন ট্রেন চালু করা সম্ভব হয় না। চলতিপথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাত্রাপথে বিড়ম্বনা বাড়ায় নতুন করে ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভাবছে রেলওয়ে।
গত ১২ জানুয়ারি রেলওয়ের বহরে থাকা লোকোমোটিভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং লোকোমোটিভের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের লক্ষ্যে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। কমিটিতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পশ্চিম) সাদেকুর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগের রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান, এসএসএই ঢাকা দেলোয়ার হোসেন ও তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের বহরে প্রথমবারের মতো ২০০০ সিরিজের ডিজেলচালিত জিএম বি১২ মডেলের ইঞ্জিন আসে ১৯৫৩ সালে। ২০২০ সালে কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয় ৩০০০ হাজার সিরিজের ইঞ্জিন। ১৯৫৩-১৯৫৬ সাল পর্যন্ত রেলওয়ে বহরে যুক্ত হয় ৪১টি ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে ১২টি এখনো রেলসেবায় যুক্ত আছে। যেগুলো বেশিরভাগ সময় অকেজো হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৬১, ১৯৬৩, ১৯৮৮, ১৯৯৪, ১৯৯৯, ২০২০ সালে বিভিন্ন ধাপে ১৭৯টি ইঞ্জিন আসে। এরমধ্যে ১০৫টি ইঞ্জিন পাহাড়তলী লোকোমোটিভ কারখানায় আছে। এসব ইঞ্জিনের মধ্যে ২০০০ সিরিজের দুটি, ২২০০ সিরিজের চারটি, ২৬০০ সিরিজের আটটি, ২৭০০ সিরিজের ছয়টি, ২৯০০ সিরিজের ১৫টি ও ৩০০০ সিরিজের ১৭টি ইঞ্জিন নিয়মিত সচল আছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ২৯০০ ও ৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেন চলছে। ২৯০০ সিরিজের ৪০টি ও ৩০০০ সিরিজের ৩০টি ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে। এসব ইঞ্জিনের মধ্যে দুর্ঘটনায় নষ্ট হয়ে ২৯০০ সিরিজের একটি ও ৩০০০ সিরিজের তিনটি ইঞ্জিন পাহাড়তলি ডিজেল ওয়ার্কশপে মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়াও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে উভয় সিরিজের চারটি ইঞ্জিন।
পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক এতেশাম মো. শফিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা ইঞ্জিন সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি। নিয়মানুযায়ী চাহিদার ২০ শতাংশ ইঞ্জিন রেডি রাখতে হয়। কিন্তু নানা কারনে সেটি করা যাচ্ছে না। আমরা আপাতত রেল সেবা চালু রাখতে যতটুকু প্রয়োজন তাই করছি। নতুন ট্রেন চালু করার কারণে ইঞ্জিনের চাহিদা বেড়েছে।’
রেলওয়ের রানিং স্টাফরা জানান, পূর্বাঞ্চলে যেসব ট্রেন ইঞ্জিন আছে সেগুলো প্রায়সময় চলতিপথে বিকল হয়। নিয়মিত ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিনিয়ত এমন বিড়ম্বনায় ট্রেন চালকরাও বিব্রত। এভাবে চলতে থাকলে ট্রেনের যাত্রীসেবা দিনদিন খারাপ হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের ইঞ্জিন এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিকল হয়েছে। গত ৫জানুয়ারি একদিনেই পাঁচটি ইঞ্জিন বিকল হয়েছে। বিশেষ করে মেইল ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন নিয়মিত ট্রাবল দেয়। বিকল ইঞ্জিন ফিট করে ট্রেন চালুতে দেরি হওয়ায় যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের আহবায়ক মো. মজিবুর রহমান ভুঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন সংকট প্রকট। যে ইঞ্জিনগুলো আছে সেগুলো পথিমধ্যে বসে যায়। ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পথিমধ্যে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। নতুন আনা ইঞ্জিনগুলো সচল থাকলে এমন সংকট থাকতো না। তিন হাজার সিরিজের যে ৩০টি ইঞ্জিন আনা হয়েছে সেগুলোর কোয়ালিটি ভালো না। ইঞ্জিনগুলো নষ্ট হলেই মালামাল পাওয়া যায় না। যে কারণে মাসের পর মাস ওয়ার্কশপে বসে থাকে। অথচ আগের ইঞ্জিনগুলো আমরা বড় ধরনের সমস্যা ছাড়া ২০-৩০ বছর পর্যন্ত চালিয়েছি।’