আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওমানে গোপন আলোচনায় ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় না করায় যুক্তরাষ্ট্রের ক‚টনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষক ও ক‚টনীতিকদের মতে, এতে ইরানের ওপর চাপ কমবে এবং শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের শঙ্কা বাড়বে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনার ঘোষণা দেওয়ার আগে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকে (ই৩) জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও জাতিসংঘে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তিন ইউরোপীয় কূটনীতিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইহুদি ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অব আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট বেøইজ মিসজটাল বলেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বিত ক‚টনৈতিক কৌশল প্রয়োজন। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখা হয়েছে।
ফেব্রæয়ারিতে ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল পুনর্বহাল করেন ট্রাম্প। বুধবারও তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করলে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দেন এবং বলেন, ইসরায়েল এতে নেতৃত্ব দেবে। পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ করছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যদিও তেহরান তা অস্বীকার করে।
নিষেধাজ্ঞার হুমকি ইরানকে চাপে ফেলার জন্য, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনও বিস্তারিত কৌশলগত আলোচনা হয়নি বলে কূটনীতিকরা জানান। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে না ওয়াশিংটন। ফলে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিই একমাত্র দেশ, যারা এই প্রক্রিয়া চালু করতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় জরুরি বলছেন বিশ্লেষকরা। ইরানের ঘোর শত্রু ইসরায়েল ইতোমধ্যে এই পদক্ষেপ নিতে লবিং করছে।
তিন কূটনীতিকের বরাতে জানা গেছে, ইরানকে জুনের শেষ নাগাদ এই প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে তিন ইউরোপীয় দেশ। এর জবাবে তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে এমন করলে ভয়াবহ পরিণতি হবে এবং তারা তাদের পারমাণবিক নীতি পুনর্বিবেচনা করবে। এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইউরোপীয় তিন দেশের আস্থা কম, কারণ তারা পরামর্শ ছাড়াই একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
২০১৮ সালে ট্রাম্প রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। এই চুক্তির আওতায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মকান্ড সীমিত করেছিল। রাশিয়া নতুন করে নিষেধাজ্ঞার বিরোধী।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতো, যখন তিনি ইরানের সঙ্গে একপক্ষীয় আলোচনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও একই কৌশল দেখা গেছে, যেখানে ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে ওয়াশিংটন সরাসরি মস্কোর সঙ্গে কথা বলছে।
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমমনাদের সঙ্গে কিছু বৈঠক করেছেন, কিন্তু তা যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়নি। ট্রাম্পের ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সময় মার্কো রুবিওর সঙ্গে ইরান নিয়ে বৈঠক করতেও ইউরোপীয়দের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে তিন ইউরোপীয় কর্মকর্তা জানান। ওমানে আলোচনা সম্পর্কে আগে থেকে জানা ছিল কি না—এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়নি ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র না বানাতে পারে, সে জন্য আমরা সব ক‚টনৈতিক পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, প্রয়োজনে স্ন্যাপব্যাকসহ।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বুধবার সংক্ষেপে বলেন, ফ্রান্স আলোচনাটি আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করছে। ২০০৩ সাল থেকেই ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইউরোপীয় দেশগুলো ত্রিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা করে আসছে।