এম এ হোসাইন
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি বিলুপ্ত ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনে এবার ব্যতিক্রমী ও কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে। দলটির আওতাধীন ১৫টি সাংগঠনিক (উপজেলা ও পৌরসভা) ইউনিটে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় এবার ‘সিভি জমা’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দলীয় পদপ্রার্থী হতে আগ্রহী নেতাদের রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। সবার জন্য উন্মুক্ত এ কার্যক্রমকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো সাংগঠনিক নির্দেশনায় জানানো হয়, আগামী ৭ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দক্ষিণ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে। আগ্রহী নেতাদের পিডিএফ ফরম্যাটে জীবনবৃত্তান্তসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে হবে এবং তার সঙ্গে একটি হার্ডকপিও সরবরাহ করতে হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী, দলের প্রতি আনুগত্যশীল এবং আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আবেদনকারীদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও কার্যক্রমের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করা হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা ১৫টি ইউনিটের জন্য একটি উন্মুক্ত, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে চাই। যারা পদে আগ্রহী এবং অতীতে দলের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, তারা সিভি জমা দিতে পারবেন। এমনকি কেউ যদি নতুন সদস্য হিসেবেও নেতৃত্বে আসতে চান, তারও সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ইউনিট থেকে জমা পড়া সিভিগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ বা আপত্তি আসে কিনা, তাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আমরা আহব্বায়ক কমিটি গঠন করব। এই আহব্বায়ক কমিটিগুলো পরবর্তীতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক ঐক্য ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সহজ হবে বলেও মত দিয়েছেন তারা। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই পুরো কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ নিয়ে আসার এই উদ্যোগকে ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
সদস্য সচিব হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই সব ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় কাঠামোকে শক্তিশালী করতে চাইলে নেতৃত্ব বাছাইয়ে স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই হবে। আর সে কারণেই আমরা এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
এর আগে ২২ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পরিচিতি ও প্রথম সাংগঠনিক সভায় দলের আওতাধীন সব উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। নগরের একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আহব্বায়ক মো. ইদ্রিস মিয়া। নতুন করে ইউনিট কমিটি গঠনের জন্য সিভি আহবান করেছে জেলা বিএনপি। এজন্য জেলা বিএনপির ৫ সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, মোস্তাক করিম চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম মিঠু, কৌছার কবির রুবেল এবং মো. মাছুম উদ্দিন। তারা সিভি সংগ্রহ ও প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের কাজ পরিচালনা করবেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ জেলা বিএনপির আংশিক আহব্বায়ক কমিটি এবং ৬ মে ৫৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই দলের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়।