ইংরেজি ও তিন পার্বত্য জেলার প্রভাব চট্টগ্রামে

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সব বিষয়ের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে কম ইংরেজিতে। তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে বেশি অকৃতকার্য হওয়ায় পুরো শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলে তার প্রভাব পড়েছে বলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা মনে করছেন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলছেন, ইংরেজিতে ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক এবং ভালো মানের’ শিক্ষক না থাকা, ‘ওভার মার্কিং’ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ কয়েকটি কারণে এবার পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা কমেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেখানে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। খবর বিডিনিউজের।
সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ০৯৭ জন শিক্ষার্থী, আর চট্টগ্রাম বোর্ডে পূর্ণ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ হাজার ০৯৭ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার বিষয়ভিত্তিক পাসের হার সবচেয়ে কম ইংরেজিতে। এই বিষয়ে পাসের হার ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় ভালো শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম। পদায়ন করলেও তারা নানা কারণে সেখানে থাকেন না। ফলে ক্লাস হয় কম।
ইংরেজি শিক্ষকরা বেশিরভাগ চট্টগ্রামের মত বড় শহরে থাকতে চান। ফলে শিক্ষক স্বল্পতা প্রকট। পাবর্ত্য তিন জেলায় বেশিরভাগ অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছে।
তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৪১ দশমিক ২৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৩৫ দশমিক ৫৩ এবং বান্দরবানে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরমধ্যে রাঙামাটিতে ৩৯ জন, বান্দরবানে ৯৩ জন এবং খাগড়াছড়িতে ২৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
২০২৪ সালে রাঙামাটিতে ৬০ দশমিক ৩২, খাগড়াছড়িতে ৫৯ দশমিক ৬৩ এবং বান্দরবানে ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে স্থানীয় শিক্ষক ছাড়াও বাইরে থেকে অনেক শিক্ষক ওখানে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
এনটিআরসির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পান, তারা কিছুদিন পরপর আবার অন্য কোথাও চলে আসেন। এটা একটা বড় সংকট। শিক্ষক স্বল্পতার কারণেই নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও কিছুটা শিক্ষা বিমুখ হয়ে যাচ্ছে।
তিন পার্বত্য জেলার আরো কিছু সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা গিয়ে দেখেছি, অনেক কলেজে ক্লাসরুমসহ অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নেই। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট নেই। এই অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ালে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবে। দূরত্বের কারণে সেখানে শিক্ষার্থীরা একদিন ক্লাসে আসে হয়ত, কিন্তু পরদিন ক্লাস টেস্টে আসে না। ফলে পুরো শিক্ষাক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারে না।
সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, সেখানে অনেক শিক্ষার্থী অনেক দূর থেকে আসেন। তাই শিক্ষকরা যদি ক্লাসের ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না আসতে পারলেও বাড়িতে বসে অনলাইন ক্লাসে জয়েন করতে পারবে। এসব সংকট নিরসনে করণীয় তুলে ধরে পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, অবিলম্বে শিক্ষক স্বল্পতা দূর করা, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করা, দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের রুবিক্স এর ধারণা প্রদান করা দরকার।
পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কর্মসূচি নেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।
ওভার মার্কিং হয়নি : পুরো চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলেও এবার বিপর্যয় দেখা গেছে। ২০২৪ সালে পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ২৬৯ জন। আর এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৯৭ জন।
পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমার কারণ জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, এবার মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে। ওভার মার্কিং করা হয়নি। খাতায় একজন পরীক্ষার্থী যত নম্বর পাবে ঠিক তত নম্বরই দেওয়া হয়েছে। অতীতে ওভার মার্কিং করা হত।