আ.লীগ কর্মীদের বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছেন

26

এম এ হোসাইন

দলীয় নেতাকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদ হারিয়েছিলেন হেলাল উদ্দিন। বহিস্কৃত এই নেতা পরবর্তীতে দলের সদস্যপদ ফিরে পান। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা বন্ধ হচ্ছে না। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিএনপির পরিচয় দেয়ার মতো অভিযোগ উঠছে হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সাবেক মন্ত্রী ও আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লায়ন হেলাল উদ্দিনের। হেলাল উদ্দিনের মাধ্যমে বিরোধীপক্ষকে (বিএনপিকে) নিয়ন্ত্রণ করতেন সাইফুজ্জামান জাবেদ। এই সম্পর্কের পুরস্কার হিসাবে জাবেদের মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে বড় অংকের লোনও পান হেলাল উদ্দিন। সেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী ছিলেন মো. নেছার উদ্দিন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন বিএনপির লোক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে অস্ত্রবাজি করা মো. শিবলুও এখন বিএনপির লোক বলে পরিচয় দেন। তাদের মতো অনেককেই এখন দলে ভেড়াচ্ছেন আনোয়ারা উপজেলার বিএনপি নেতা লায়ন হেলাল উদ্দিন।
আনোয়ারা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যারা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা-নির্যাতন করেছে এখন তাদের বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছেন হেলাল। আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়েছিল হেলাল। দলের এক নেতাকে ছুরিকাহত করায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এখনো একই কাজ করে যাচ্ছেন। চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে দখল সব কিছু করছেন। দলীয় হাইকমান্ডকে এ বিষয়ে লিখিত জানানো হয়েছে।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লায়ন হেলালের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চাঁদা দিতে চাপ দেয়ার দৃশ্য দেখা যায় ভিডিওটিতে। সেখানে ৫ লক্ষ টাকা লেনদেনের চিত্র ফুটে উঠে। যদিও সেই ভিডিওটিকে ২০২০ সালের ঘটনা বলে জানিয়েছেন লায়ন হেলাল।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব বরাবরে সম্প্রতি একটি অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের আহŸায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত পত্রে নানা অভিযোগ তোলা হয়। এতে লায়ন হেলালের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দলকে কলঙ্কমুক্ত করার আহবান জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য জয়নাল উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত না। চাঁদা হোক, জবর দখল হোক, দলের স্পষ্ট ঘোষণা আছে তথ্য প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা হবে। আমি চাঁদা নিয়েছি এটা সত্য না, বিভ্রান্তিকর তথ্য। ভিডিওটা ২০২০ সালের। জায়গা সংক্রান্ত সালিশের একটি ঘটনা। ওরা কেউ অভিযোগ দিছে এমনও না। এখন যেটা হচ্ছে সেটা জেলা কমিটি কেন্দ্রিক অপতৎপরতা। এসব বিষয়ে আমি টোটালি অবগত না।’
২০২২ সালে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার আগে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আট সদস্য কেন্দ্রে অভিযোগ করেছিল। অভিযোগে বলা হয়, লায়ন হেলাল উদ্দিন বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার আসামি। জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যামামলায় মো. হেলালের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি শহিদ চেয়ারম্যান, কালা মাহবুব, সোবহান ড্রাইভার আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। মো. হেলাল এর আগে আনোয়ারার কোনো ইউনিয়ন কিংবা উপজেলা বিএনপির পদ-পদবিতে না থাকলেও তাকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য করা হয়। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলের নেতৃত্বে আনা নিয়ে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হেলাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। হেলালের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা রয়েছে। দলের বিভিন্ন নেতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধার করা টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে অনেক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।