পূর্বদেশ ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলের মধ্যে ১৪ বছরে সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজে ২৯ হাজার কোটি থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ধারণা পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। তাদের হিসাবে টাকার ওই অংক সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্পে মোট বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশের সমান।
গতকাল বুধবার ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি ‘গবেষণা প্রতিবেদনে’ প্রকাশ করা হয়। ‘সড়ক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণাটি করেছেন মো. মোস্তফা কামাল ও মো. জুলকারনাইন। খবর বিডিনিউজের।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ঠিকাদারের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের নীতি নির্ধারণ, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে এই দুর্নীতি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সড়ক ও সেতু খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
একেবারে নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ঘুষ লেনদেনে ৪০-৪৩ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। এখন ত্রিপক্ষীয় সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।
গবেষণাপত্রটি তৈরিতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নানা প্রকল্পের তথ্য চাইতে গেলে তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, যেসব তথ্য প্রকাশযোগ্য সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তব কথা হল, প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে তবে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার তো পরিবর্তন হয়নি। তাই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করছি না।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের গবেষণা প্রতিবেদন শুধু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে হয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতেও ‘কম বেশি দুর্নীতি হয়েছে’। এতে দেশীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি আমলাতন্ত্রের যোগসাজশ হয়েছে।
টিআইবির গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণার আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলো ছিল। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত।
গবেষণায় সড়ক নির্মাণ, সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, সেতু উন্নয়ন (অনুর্ধ্ব ১৫০০ মিটার) ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০টি জোনের ১৩টি সার্কেলের ২১টি বিভাগীয় দপ্তরের (জেলা পর্যায়) আওতাধীন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।