নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসুল (দ.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী ৪০তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল রবিবার তৃতীয় দিনে বক্তারা বলেছেন, প্রিয় নবীর (দ.) সান্নিধ্যপ্রাপ্ত সাহাবিগণ আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) প্রতি তাজিম-মহব্বত ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। নবী পরিবার তথা আহলে বায়তের রাসুলের (দ.) প্রতি মহব্বত ভালোবাসা ও আনুগত্যই ঈমানের অনিবার্য দাবি। এর অন্যথা হলে নিজেকে ঈমানদার দাবি করা যাবে না।
প্রিয় নবী (দ.) বলেছেন, আমি ইলমের শহর আর হযরত আলী (রা.) সে শহরের দরজা। হযরত আলী (রা.) আমার থেকে এবং আমি আলী (রা.) থেকে। এতেই অনুধাবন করা যায় হযরত আলী (রা.) ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) মর্যাদা।
মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা হাফেজ আবদুল আলীম রেজভি বলেন, মুসলমানদের অন্তরে নবীপ্রেম ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করতেই খতিবে বাঙাল আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (রহ.) এই শাহাদাতে কারবালা মাহফিল প্রবর্তন করে যুগ সংস্কারক হিসেবে ভ‚মিকা রাখেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি কোরআন মজিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাক সমস্ত ইবাদত বন্দেগির ঊর্র্ধ্বে। তিনি কোনো কাজ করেন না। তবে আল্লাহ পাক তার ফেরেশতাদের নিয়ে অবিরত দরুদ পাঠ করেন। নামাজে-ইবাদতে আমরা প্রিয় নবী (দ.), তাঁর বংশধর ও আহলে বায়তের স্মরণ করি। প্রিয় নবীর (দ.) ওপর দরুদ না পড়লে কোনো ইবাদতই আল্লাহ পাকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এতেই বোঝা যায় প্রিয় নবী (দ.) ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) শান-মর্যাদা।
ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বিষয়ে আলোচনায় ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, সুন্নি জামাতই নাজাত ও মুক্তিপ্রাপ্ত। প্রিয় নবী (দ.) ও আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) প্রতি মহব্বত ভালোবাসাই সুন্নিয়তের নিদর্শন। সুন্নিয়তের দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে তার জন্য দুনিয়া আখিরাতের কোনো ভয় নেই।
কুরআন সুন্নাহর আলোকে হযরত আলী (রা.) এর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করেন নেছারিয়া কামিল মাদ্্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, কেবল আশেকে ইলাহি হওয়া বড় কথা নয়, আশেকে রাসুল (দ.) হওয়াই ঈমানের দাবি। মওলা আলী (রা.) এর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং প্রিয় নবী (দ.)। তাঁকে যথাযথভাবে মানা ও সম্মান করাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আক্বিদা। তাঁর প্রতি অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে কেউ যেন পথভ্রষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। সাহাবিগণের দৃষ্টিতে আহলে বায়তের মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন রাউজান দারুল ইসলাম কামিল মাদ্্রাসার অধ্যাপক আল্লামা আহমদুল্লাহ ফোরকান খান আলকাদেরী। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। সাহাবিগণ নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন প্রিয় নবী (দ.) ও আহলে বায়তে রাসুল (দ)কে। আহলে বায়তের প্রতি তাজিম ও মহব্বত ফরজ।
ছিপাতলী জামেয়া গাউসিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্্রাসার মুদাররিস আল্লামা মঈনুদ্দিন খান মামুন আল কাদেরী বলেন, আল্লামা জালাল উদ্দিন আল কাদেরী (রহ.) শুধু একজন আলেম নন, তিনি মহান ওলী। আহলে বায়তে রাসুলের (দ.) প্রতি মহব্বত ও প্রেম জাগ্রত করতে তিনি শাহাদাতে কারবালা মাহফিল প্রবর্তন করেন।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের গবেষক আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন, আলহাজ শাহাব উদ্দিন আলম।
মাহফিলে কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আবু বারাকাত মুহাম্মদ রেজা। না’তে রাসুল (দ.) পরিবেশন করেন মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বাঁধন। ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মাওলানা আহমদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক ও পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, আলহাজ খোরশেদুর রহমান, আলহাজ মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, অধ্যক্ষ অহিদুল আলম, আলহাজ পেয়ার মুহাম্মদ, প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদ, হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক, মুফতি মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন, মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন, আব্দুল হাই মাসুম, আলহাজ মুহাম্মদ দিলশাদ আহমেদ, জাফর আহমদ সাওদাগর, ব্যাংকার হাফেজ ছালামত উল্লাহ, মুহাম্মদ মনসুর সিকদার, মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, মাহবুবুল আলম, মুহাম্মদ মাইনুদ্দীন মিঠু, মোহাম্মদ নাজিব আশরাফ, ওসমান গণি প্রমুখ। খবর বিজ্ঞপ্তি।