পূর্বদেশ ডেস্ক
পরিবেশগত দিক থেকে বর্তমান সভ্যতাকে আত্মবিধ্বংসী হিসেবে উল্লেখ করে পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে তৃতীয়বারের মত আয়োজিত বে অব বেঙ্গল করভারসেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই আহবান জানান। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে এই সম্মেলন চলবে সোমবার পর্যন্ত। খবর বিডিনিউজের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আসুন আমরা একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করি। বর্তমান সভ্যতা আমাদের ব্যর্থ করেছে। পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটা আত্মবিধ্বংসী সভ্যতায় পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে এটি চূড়ান্তভাবে সম্পদের অসম বণ্টন ঘটিয়েছে।’
বক্তব্যে তার বহুল প্রচারিত ‘থ্রি জিরো’ বা তিন শূন্যের তত্ত¡ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের তিন শূন্যের বিশ্ব তৈরি করতে হবে, শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদের ঘনত্ব-সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের পরিবর্তে মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য সামাজিক ব্যবসা চালু করে, শূন্য বেকারত্ব তরুণদের উদ্যোক্তায় পরিণত করে, চাকরিপ্রার্থীদের পরিবর্তে যা আমরা এখন করি।
মানুষের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করে তা অনুসরণ করি। ইউনূস তার বক্তব্যে ছাত্র-গণআন্দোলনের ফ্যাসিবাদ শাসনের পতনের বিষয়ে বলেন, গত ষোল বছর দেশ শাসন করা ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটিয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিপ্লব।
তিনি তার বক্তব্যে প্রায় ১৫০০ ছাত্র জনতার প্রাণ হারানো, ২০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার তথ্যও তুলে ধরেন।
ইউনূস বলেন, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে চ্যালেঞ্জ এবং জটিলতা আমাদের চারপাশে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি- এসব সমস্যা আমাদের জন্য ভয়ানক। তবে বাংলাদেশে, আমরা জানি প্রতিক‚লতা মোকাবিলা করে কীভাবে সম্ভাবনা তৈরি করতে হয়।
তিনি বলেন, কয়েক দশক আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কাজ করে, তাদের সাহস এবং শক্তি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি শিখেছি।সেই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিটি সমস্যার একটি সমাধান থাকে, সম্ভবত একাধিক সমাধান, যদি আমাদের ধৈর্য থাকে, চেষ্টা করার সাহস থাকে এবং চালিয়ে যাওয়ার অধ্যবসায় থাকে। আমরা জানি কোনও দোষ না থাকার পরও কঠোর শাস্তি পেতে, বড় শক্তির মুখোমুখি হতে কেমন লাগে। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে যখন আমরা একত্রিত হই, যখন আমরা এক হয়ে কাজ করি, তখন আমাদের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে। একশ দিন আগে বাংলাদেশে আমরা তা দেখিয়েছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখভাগে রয়েছে। প্রতি বছর আমাদের উপক‚লীয় জনগোষ্ঠী পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পরিবর্তিত আবহাওয়ার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সংকট পরে সমাধানের জন্য নয়, এটি অবিলম্বে সম্মিলিত পদক্ষেপ দাবি করে প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিপুল সম্ভাবনার একটি অঞ্চল। আমাদের দেশ তরুণদের দেশ। ১৭১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধেক জনসংখ্যার বয়স ২৭ বছরের কম। কত বড় শক্তি। এটি দেশকে সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলে। আমাদের যুবসমাজের টেকসই উন্নয়নে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার, আমাদের পরিবেশ রক্ষা ও প্রচারের জন্য সবুজ বৃদ্ধির মডেল তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর জন্য সহযোগিতা, সাহস এবং আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যতের প্রতি অটল বিশ্বাসের প্রয়োজন।
আমি আপনাদের প্রতি আহবান জানাই, আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় এমন একটি নতুন বিশ্ব গড়ার কথা ভাবুন, যেখানে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল সবার জন্য ভাগ করা হবে, কেবল সুবিধাভোগী কিছু মানুষের জন্য নয়।