লোহাগাড়া প্রতিনিধি
লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া এলাকায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি একটি মাদ্াসার বার্ষিক সভায় গিয়েছিলো মুমিনুল। এর মধ্যে একপক্ষের সাথে আরেক পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির সময় মুমিনুল ঘটনাস্থলে ছিল না। পরে তাকে দেখে প্রতিপক্ষের সাথে এসেছে ভেবে তার উপর ক্ষেপে যায় কিশোর গ্যাং।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শকিল আর সাকিব মুমিনুলকে পেছন দিক থেকে ঝাপটে ধরে। এ সময় মোহাম্মদ আলী রিয়াদ উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে মুমিনকে। ফলে ঘটনাস্থলেই কিশোর মুমিনুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ ঘটনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
মমিনুলের মা খুরশিদা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, আট বছর আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। ছেলে দুটোর মুখের দিকে তাকিয়ে নতুন সংসারে পা বাড়াননি আর। স্বামীর স্মৃতিটুকুু বুকে জড়িয়ে দীর্ঘ সময় পার করেছি। তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন, তার ছেলেরা বড় হয়ে মায়ের দুঃখ ঘুচাবে, কিন্তু বিধি বাম। তাও হলো না। বড় ছেলে মুমিনুলকে ছুরিকাঘাতে শেষ করে দিল পাশের গ্রামের কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীরা। স্বামী-সন্তানহারা খুরশিদা বেগমের চোখে এখন ঘোর অমানিশা। এক সপ্তাহ হলো তার কলিজার টুকরা ছেলে খুন হয়েছে। এখনো কান্না থামেনি মায়ের।
প্রতিবেশীরা জানান, ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় খুরশিদা বেগম। মুখে দানাপানি নিচ্ছেন না তিনি। কোনো কারণ ছাড়াই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হলো পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মুমিনুল। তিনি মনকে কিছুতেই মানাতে পারছেন না।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, আমার ছেলেটা কোনো অপরাধ করেনি। আমার এতিম ছেলে মুমিনুল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, হক হালালভাবে চলত। আমি আমার বুকের ধন হারিয়ে ফেললাম কোন অপরাধে। আমার ছেলের খুনীরা কি বিচারের আওতায় আসবে না?
এদিকে এই নির্মম ঘটনায় আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের গ্রেফতার করছেন না। বরং এলাকার লোকজন ১ নং আসামির ভাইকে ধরে পুলিশে খবর দিলে সেখানে যেতে কয়েক ঘন্টা দেরি করে। এছাড়া ৩ নং আসামি চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার খবর পেয়ে এলাকার লোকজন গিয়ে তাকে ঘেরাও করে রাখে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়।
এদিকে আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে ঘটনার পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করে পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ও এলাকার সচেতন মহল। মানববন্ধনে প্রধান শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের ছাত্র মুমিন অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী। এতিম এই ছেলেটার হত্যাকান্ড কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে পরবর্তীতে কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস করবে না।’ পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি মানবন্ধন করে নালারকুল, সাতগড়িয়া পাড়া, হাজি রাস্তা ওয়াজ উদ্দিন সিকদার পাড়ার এলাকাবাসী। এতে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ পেয়ারু, জামায়াত নেতা নাজিম উদ্দিনসহ শত শত মানুষ। তারা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানান। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। তারা সবাই পুটিবিলার ছেলে তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত।
তারা স্মারকলিপিতে বলেন, ঘটনার প্রায় ১ সপ্তাহ পার হলেও খুনিরা গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এই পুঞ্জিভূত ক্ষোভ একসময় বিস্ফোরণে রূপ লাভ করে এলাকার আইনশৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে বলে ও আশংকা করছেন তারা।
এদিকে পুলিশের তৎপরতা না থাকা নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগাড়া থানার এসআই মো. জহিরুল ইসলাম দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, আমরা থানার সবাই এই ঘটনা নিয়ে সিরিয়াস তৎপর আছি। আজকেও পুটিবিলায় গিয়েছি। এর আগে ১নং আসামি বান্দরবানে আছে খবর পেয়ে সেখানেও গিয়েছি। কিন্তু গ্রেফতার করতে পারিনি। তবে এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি, আমরা আসামিকে ধরতে সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, আমরা আসামি গ্রেপ্তারের সম্ভাব্য স্থানসমূহ অভিযান পরিচালনা করছি। বাদির সাথে যোগাযোগ এবং সোর্সের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান সনাক্তকরণ চেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শীঘ্রই আসামিরা ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।