আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী
আজ ১৭ রমজান। মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন। কাফেরদের জুলুম-অত্যাচারে প্রিয় নবী ও মুসলমানগণ নিজ মাতৃভূমি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। তবুও কাফেরগণ থেমে থাকেনি। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চালাতে থাকে। তারা শান্তির ধর্ম ইসলামকে চিরতরে নিঃশেষ করে দিতে তৎপর হয়ে উঠে। ফলে হিজরতের দ্বিতীয় বছর ১৭ রমজান সংঘটিত হয় বদরযুদ্ধ। এ যুদ্ধ মুসলমানদের জন্য এক যুগান্তকারী সোনালী ইতিহাস রচনা করে। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বদর নামক প্রান্তরে সংঘটিত হয় এ যুদ্ধ।
বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র নিয়ে সদর্পে সমবেত হয় কাফেরগণ। পক্ষান্তরে মুসলমানগণ ছিলেন সংখ্যায় কাফেরদের এক তৃতীয়াংশ। তদুপরি তাদের ছিল না কোন সমরাস্ত্র। শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি দৃঢ় আস্থা ও ভালবাসার ঈমানী বলই ছিল তাঁদের একমাত্র সম্বল। সর্বোপরি আল্লাহর উপর ভরসা।
কাফির মুশরিকদের ধারণা ছিল, মুসলমানদের প্রাথমিক অবস্থায় নিশ্চিহ্ন করা গেলে চিরতরে ইসলাম নিস্তব্ধ হয়ে যাবে। এ লক্ষ্যে প্রায় এক হাজার লোকের বিরাট বাহিনী নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। মহান আল্লাহর ইচ্ছা এ অভিযানে মুসলমানদেরকে এক অকল্পনীয় ও যুগান্তকারী বিজয় দান করবেন।
হুজুর পাক (সা.) সাহাবীগণের সাথে পরামর্শ সভা করলেন। এতে আনসার ও মুহাজির উভয় পক্ষের সাহাবীগণ রাসুলে পাকের (সা.) প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের কথা দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেন। নবীপ্রেমে আত্মোৎসর্গকারী এ সৈন্য বাহিনী প্রিয়নবীর (সা.) সাথে রওয়ানা হয়ে ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে উপনীত হলেন। ১৭ রমজান জুমার দিন ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যখন কোরাইশ বাহিনী সাড়ম্বরে বের হল। তখন রাসূলে পাক (সা.) আল্লাহর দরবারে সাহায্যের আশায় হাত উঠালেন। আবেগাপ্লুত কন্ঠে আল্লাহর সাহায্য কামনায় দোয়া করলেন।
অতঃপর রাসুলে পাক (সা.) সমবেত মুসলমানদেরকে সুসংবাদ দিলেন, আল্লাহ পাক ফেরেশতা দ্বারা তাদের সাহায্য করবেন। বদরযুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং নিশ্চয় আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন, যখন তোমরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ছিলে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ যুদ্ধের ফলাফলও হলো সম্পূর্ণ মুসলমানদের অনুক‚লে। মুসলমানগণ ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করলেন। এ বিজয় একমাত্র আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছিল। একদিকে কুরাইশদের সহস্রাধিক সশস্ত্র সুসজ্জিত বাহিনী। অন্যদিকে ঈমানী বলে বলিয়ান মাত্র ৩শ ১৩ জন অপ্রস্তুত নিরস্ত্র সাহাবীদের দ্বারা গঠিত ক্ষুদ্র বাহিনী। যুদ্ধে কাফিরদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। পক্ষান্তরে মুসলমানদের ১৪জন শাহাদাত বরণ করেন। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধবন্দীদের বিনা প্রতিশোধে ক্ষমা ঘোষণা করে মানবতা ও উদারতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বদর যুদ্ধের বহুবিদ তাৎপর্য ইসলামের ইতিহাসে অনন্য মহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে।
এ যুদ্ধ হতে মুসলমানদের ক্ষমা-উদারতা সর্বোপরি আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস ও রাসুলে পাকের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে পালনের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। রাসুলে পাকের (সা.) অনুপম আদর্শ নিজ জীবনে ধারণ ও লালন করলে বর্তমান সময়েও মুসলমানগণ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করবে নিঃসন্দেহে। এ মহান দিবসে যেসব নিবেদিতপ্রাণ সাহাবী আত্মোৎসর্গের নজির সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি। আমাদেরকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণের তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক তরজুমান