আলোর ফেরিওয়ালা অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন মন্টু

3

মুজিব ইমরান বিপ্লব

অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন মন্টু ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মরহুম নূর আহমদ কন্ট্রাকটর এবং মায়ের নাম মরহুমা নুরজাহান বেগম। তাঁরা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে ছায়াশীতল চট্টগ্রামের বাকলিয়া (বর্তমানে ৬ নং পূর্ব ষোলশহর) গ্রামে।
অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন মন্টু লেখাপড়ায় ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি সরকারি জুনিয়র হাই স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেন। মাধ্যমিকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ৮ম স্থান অধিকার করেন এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ স্থান অধিকার করেন এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বি.এ অনার্স শেষ করেন।
তিনি চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সেন্ট প্লাসিড উচ্চ বিদালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং ফেনির ছাগলনাইয়া কলেজে অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন।
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকা পিপলস ভিউ ও চট্টগ্রামের নয়াবাংলা ও দেশের কথা পত্রিকায় সাংবাদিকতা ও বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেছেন দীর্ঘদিন।
অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন মন্টু বিদ্যাবুদ্ধিতে পরিপূর্ণ হলেও কখনো কারো কাছে প্রকাশ করতেন না। সবসময় সবার কাছ থেকে সব বিষয়ে জানার আগ্রহ ছিল প্রবল। সব সময় মুখে হাসি, বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহের বাহুডোরে রাখতেন। তিনি ধর্ম পালনে ছিলেন অগ্রগামী, শত ব্যস্ততার মাঝেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে কখনো ভুল করতেন না। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান রাখতেন, কিন্তু ধর্ম নিয়েবাড়াবাড়ি করা পছন্দ করতেন না। আল্লাহর উপর ভরসা ও প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর আদর্শের প্রতি ছিল অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা।
তিনি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম ব্রাদ্রার্স ইউনিয়ন ক্লাব, চকবাজার বাচ্চু স্মৃতি সংসদ ও পশ্চিম কাপাসগোলা মহল্লা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত ছিলেন।
তিনি এলাকার ছেলে মেয়েদেরকে বিনা বেতনে পড়াতেন। বিশেষ করে ইংরেজি ও অংকে দুর্বল ছেলেমেয়েদের তিনি বিশেষ যতœ সহকারে পড়াতেন। তার অনেক ছাত্রছাত্রী বর্তমানে সরকারি বেসরকারিবিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
ছোটকালে বাবা মারা যাওয়ায় নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের পড়ালেখা ও সংসার চালাতে গিয়ে সে সময়ে তাঁকে খুব পরিশ্রম করতে হয়। নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি বাসায় বাসায় গিয়ে শিক্ষকতা করে সংসার খরচ চালাতেন। পরিবারের বড় ছেলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন – যৌবন আর সাজাতে পারেননি এবং কাউকে নিজের অনিশ্চিত জীবনের সাথে জড়াননি। তাই তিনি চিরকুমার ছিলেন।
তিনি ভাইবোনদের কাছে ছিলেন পিতৃতুল্য। তিনি তার সব সহায় সম্পত্তি ভাই-বোনদের মাঝে বিলিয়ে দেন।
সেই গুণী ও আলোর ফেরিওয়ালা অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন মন্টু ২০১৬ সালের ২৫ মে ৬৯ বছর বয়সে কাপাসগোলায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।