আলিফ হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল আদালত পাড়া

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার জেরে উত্তাল চট্টগ্রাম আদালত পাড়া। হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আইনজীবীরা। এছাড়া একই দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত আদালতে কর্মবিরতি পালন করা হয়। এসময় বন্ধ ছিল আদালতের কার্যক্রম। আইনজীবীদের এই সমাবেশে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার, সুষ্ঠু বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। এছাড়া গতকাল বাদ জোহর কোর্ট হিল জামে মসজিদে আইনজীবী আলিফের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়নবিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও যোগ দেন। বিক্ষোভ মিছিল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি, কোতোয়ালী মোড় ঘুরে একই জায়গায় এসে শেষ হয়েছে।
সমাবেশে আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আসামিকে প্রিজনভ্যানে তোলার পর ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা প্রিজনভ্যান ঘেরাও করে আদালত প্রাঙ্গণে উল্লাস করেছে। সেদিন এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ ছিল। পুলিশ প্রিজনভ্যান ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে মনে করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অনেক ভিআইপি আসামিকে প্রিজনে করে আদালতে আনতে দেখেছি। সেসময় তাদের সমর্থকদের পুলিশ প্রিজনভ্যানের পাশেও দাঁড়াতে দেয়নি। কোন উদ্দেশ্যে তাহলে সেদিন পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে চলে গেছে? যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমরা চিনি, জানি। পুলিশ প্রশাসন এখনো বসে আছে। আমরা হুঁশিয়ার করে বলছি, আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। আপনারা পুলিশে থাকবেন না। আমরা গিয়ে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলব আপনাদের।’
পুলিশের নীরবতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাই সাইফুল ইসলাম আলিফ তার পেশাগত কাজ শেষ করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে ওই রঙ্গম সিনেমার গলিতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা সেটা হতে দেব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শোকাহত এবং ভারাক্রান্ত। চট্টগ্রাম আদালতের ইতিহাসে এমন নৃশংস ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আমাদের দাবি, যতগুলো মামলা হবে এ চিন্ময় দাস যাতে সবগুলোতে এক নম্বর আসামি করা হয়। আমাদের ভাই সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনের মামলায় আপনারা কোনো আইনজীবী অংশ নেবেন না। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব।’
সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিয়াজুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একইসঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পাশাপাশি হত্যাকারীদের পক্ষে যেন কেউ ওলাকতনামা না দেই আমি সে অনুরোধ করব সবাইকে।’

দ্বিতীয় দিনের মত বন্ধ আদালতের কার্যক্রম : চট্টগ্রাম আদালতের সরকারি আইন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আইনজীবীদের কর্মবিরতির প্রেক্ষিতে গত দুইদিন বন্ধ ছিল আদালতে কার্যক্রম। চট্টগ্রামের ৭৪টি আদালতে কোনো মামলার শুনানি হয়নি। এছাড়া আগামী ১ ডিসেম্বর দুপুরে শোক মিছিল, আইনজীবী সমিতির বার্ষিক প্রীতি সমাবেশ এবং বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা করা হয়।
সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান জানান, ‘আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম আদালতের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো কোন মামলার শুনানি হয়নি।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্তে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে দুদিন আদালতে কর্মবিরতি পালন করছেন আইনজীবীরা। এছাড়া আগামী ১ ডিসেম্বর দুপুরে শোক মিছিল, আইনজীবী সমিতির বার্ষিক প্রীতি সমাবেশ এবং বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান স্থগিতের করা হয়।’