বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করার প্রক্রিয়া চলছে তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলনের আমির, চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন তারা আর ‘পরগাছা’ হতে চান না, ‘বটগাছের’ মত মজবুত হয়ে সংসদে যেতে চান।
গতকাল শুক্রবার দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় তিনি বলেন, এর আগে ‘সুন্দর সুন্দর কথা’ বলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ব্যবহার করেছে।
সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ইসলামী দলগুলো রয়েছে-সমমনা আমরা সবাই নির্বাচনের সময় যেন ইসলামের পক্ষে বাক্স পাঠাতে পারি, সেই চিন্তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতেছি। দোয়া করতে থাকেন। আশা করি, ভালো একটা ফল আল্লাহ আমাদের দান করবে’। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, ‘১৯৮৭ সালে আমাদের দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের দলীয় মার্কায় কোনো এমপি সংসদে যায়নি। এর পেছনে কারণটা কী? আমাদের সাংগঠানিক দুর্বলতা, না আমাদের লোকবল নাই, না সমর্থন নাই? এগুলা না, আসল কথা হল যারা ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় দেশের চেয়ে- তারা বারবার আমাদেরকে মুখরোচক সুন্দর সুন্দর কথা বলে অনেক আশা-আকাঙ্খা দেখিয়ে আমাদেরকে বারবার ব্যবহার করেছে। আমাদেরকে সিঁড়ি বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে উঠে- বাস্তবতা আমরা দেখেছি। ইসলামী আন্দোলন আমরা চাই, আমরা যেন আর ওই স্বার্থান্বেষী মহলের সিঁড়ি হিসেবে পরগাছা না হই। এবার ইসলাম নামের গাছটা বাংলার জমিনে বটের চেয়েও মজবুত হয়ে সংসদের মসনদে বসবে’।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোট বাঁধার প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ কয়েকটি দল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বাদে আর সব নির্বাচনেই অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। এ নিয়ে দলটি আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে সমালোচনায় পড়ে দলটি।
১৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী যুব আন্দোলনের কনভেনশনে চরমোনাইর পীর বিএনপিকে ‘তালগাছ’ দেখান। সেখানে তিনি বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা মনে করেন আপনারা অনেক তালগাছ হয়ে গেছেন। আসলে আপনাদের পায়ের নিচে মাটি নাই’।
তখন সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন নিয়ে জোরেসোরে দাবি জানালেও গতকাল শুক্রবারের জনসভায় সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি।
গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামের আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে করমর্দনরত ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বরিশালে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে চরমোনাই পীরের আতিথ্য গ্রহণ করেন জামায়াতের আমির। সৌজন্য সাক্ষাতের পর দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, তারা একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
‘হাসিনার সাপোর্টার’ হিসেবে দায় স্বীকার
ইসলামী আন্দোলনের আমির দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা বারবার ব্যবহৃত হওয়ার কথা বলেছেন। একই সভায় দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলছেন, ‘হাসিনার সাপোর্টার’ হিসেবে তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
মোসাদ্দেক বিল্লাহ বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর্সের একজন গভর্নর এবং বরিশালের চরমোনাই আহছানাবাদ রাশিদিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।
তিনি বলেন, ‘এই যে অপকর্মগুলো হলো আমরাও তো সাপোর্ট করছি। কীভাবে? ভোট হয় নাই ধরলাম। ১৪, ১৮, ২৪ এ ভোট হয়নি ধরলাম। তারপরও তো আমাদের ছেলে-পেলেরাই, আমাদের লোকজনরাই এই প্রশাসনের লোকসহ সব জায়গায় তারা এই হাসিনার পেছনে থেকে তার অপকর্মগুলোকে সাপোর্ট করে গেছে।
‘করছে, কী করে নাই? চিৎকার করে সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে জানতে চান তিনি। সমাবেশ থেকে জবাব আসে, ‘করছে’।
তারা নিজেরাও দায়ী বলে তুলে ধরে এই নেতা বলেন, ‘এখানে আমাদের ভ‚মিকা আছে না? এখানে আমরাও দায়ী। যখন জঙ্গলে আগুন লাগে তখন কাঁচা-পাকা সব পোড়ে। আমরা সবাই কিন্তু নির্যাতিত, বঞ্চিত, বৈষম্যের শিকার হয়েছি’।